বিচারপতি জিয়াউল করিম
বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়লে অপশক্তি দেশ ও সমাজকে গ্রাস করবে
বিচারাঙ্গনে দুর্নীতির কালো মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছ- এমন অপপ্রচার প্রায়ই কানে আসে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বিদায়ী বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিদায়ী সম্বর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) বেলা সাড়ে ১১টার পর এই বিদায় সংবর্ধনা হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিরা ছিলেন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে—এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অপপ্রচার আজকাল প্রায়ই কানে আসে। বিচারব্যবস্থায় কারও একক অধিকার নেই। কারও প্রয়াস, একক প্রয়াসেও তা চলতে পারে না। সমষ্টিগত প্রয়াসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত। তাই বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম তার বিদায় সংবর্ধনায় বলেন, বিচারক থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবারই একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে।
১৯৫৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। শেষ কর্মদিবসে প্রথা অনুসারে আজ তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিদায়ী বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, সুবিচার বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদধারীকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একজন বিচারক সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের জন্য বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হলে তা প্রতিহত করতে এ অঙ্গনে যাদের কল্যাণকর পাদচারণা, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, একটি পরিবারের গৃহকর্তা যেমন তার পরিবারের সবাইকে একত্র রেখে রক্ষা করেন, আবার শাসনও করেন, ঠিক সেরকমভাবে সিনিয়র বিচারকগণও পরিবারের অভিভাবকের মতো জুনিয়র বিচারকদের ভালোবাসবেন, স্নেহ করবেন, দিকনির্দেশনা দেবেন—এটাই কাম্য। তাদের আগলে রেখে পথ দেখাতে হবে, যাতে তারা সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন। তা না হলে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত দু-একজনের পদস্খলনে পুরো বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। একবার যদি বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো সময় অপশক্তি আমাদের দেশ ও সভ্যসমাজকে গ্রাস করবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে যাই এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার দৃঢ় মানসিকতায় নিজেই নিজের কাছে শপথ নেই, তাহলে আমরা অবশ্যই সুশাসন দ্বারা আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে সোনার বাংলায় গড়তে পারব।
‘আজ বিদায়বেলায় আপনাদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আমরা যেন এমন কিছু না করি, যাতে সুবিচারের প্রতীক এই শ্বেতশুভ্র অট্টালিকার গায়ে বিন্দুমাত্র কালিমা লাগে এবং আমাদের মনে বেজে না ওঠে “মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।”
আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ১৩ আগস্ট শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। দুই বছর পর স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর আইনে এলএলবি, এলএলএম ও পিএইচডি অর্জন করেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম। তিনি ১৯৮৬ সালে জেলা আদালতে, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ও ১৯৯৬ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
এফএইচ/জেডএইচ/