টবি ক্যাডম্যান
ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধনে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধনীগুলো করা হয়েছে। সেগুলো সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। এখনো কিছু বিষয় রয়েছে, যা সংশোধন করা দরকার। ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধনে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
টবি ক্যাডম্যান বলেন, বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন। আমি যুক্তরাজ্য, মার্কিন দূতাবাস, ইইউ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি। যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, সেহেতু এখানে অনেকের সমর্থন পাওয়ার সুযোগই আমাদের রয়েছে বলে আমরা আশাবাদী।
‘তবে এখানে দেখার বিষয় হলো, বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র বিশেষ করে ইউরোপীয় কিছু রাষ্ট্র আছে যাদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে, এমন বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণকে বা প্রমাণ সরবরাহকে অস্বীকৃতি জানায়। এই বিচার প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হলে তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের পরম অপরিহার্য সমর্থন হারাবে কি না সরকারকে এ বিষয়ে আলোচনায় বসতে হবে।’
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, সেরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এই মামলার জন্য শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা ন্যায়সঙ্গত হবে কি না, সেটি আদালতের বিবেচ্য বিষয়। যেহেতু অপরাধের প্রকৃতি ও ব্যাপকতা বিচারের শেষেই বোঝা সম্ভব, তা নির্ধারণ করতে প্রসিকিউটর, বিচারকদের সব প্রয়োজনীয় সহায়তা যেন দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবো।
এই আদালতের সামনে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সবাই যেন সংবিধান, অভ্যন্তরীণ আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের সংশোধনী বিষয়ে টবি ক্যাডম্যান বলেন, আমি মনে করি, সঠিক পদক্ষেপ এরই মধ্যেই নেওয়া হয়েছে। যে সংশোধনীগুলো করা হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য এবং এখনো কিছু বিষয় রয়েছে, যা সংশোধন করা দরকার। চিফ প্রসিকিউটর বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টার কাছে আমাদের বৈঠকে আলোচিত বিষয়বস্তুগুলো উপস্থাপন করবেন, যা কি না পূর্ণতম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের মানুষকে বিশেষত গণমাধ্যমকে ধৈর্য ধারণ করে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আজ সকালে তদন্তকারী ও প্রসিকিউটরদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি এবং তাদের কাজ দেখে মুগ্ধ। সব কাজেই তারা উচ্চমানের পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যেহেতু এগুলো খুবই জটিল, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা, সেহেতু এগুলোর সঙ্গে জড়িত কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে দিতে হবে।
গত ২০ নভেম্বর ব্রিটিশ আইনজীবী, লন্ডনভিত্তিক ল’ ফার্ম ‘গুয়ের্নিকা ৩৭’ গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ‘গুয়ের্নিকা-৩৭ চেম্বার্স’র যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তিনি নিজেই তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে জানান।
এরপরই ট্রাইব্যুনাল এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে টবির নিয়োগকে ট্রাইব্যুনালের উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলে মন্তব্য করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এফএইচ/এমকেআর/জিকেএস