পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণা: অ্যাটর্নি জেনারেল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান/ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশকিছু আলোচিত বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিটের রুল শুনানিতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) তিনি এ কথা বলেন।

পঞ্চদশ সংশোধনীকে মানুষের অধিকার হরণের পদক্ষেপ উল্লেখ করে এটিকে ‘কালারঅ্যাবল লেজিসলেশন’ বলে অভিহিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, এই সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণা। একটি নির্দিষ্ট দলের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা ও ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠা করতেই ত্রয়োদশ সংশোধনীকে পাশ কাটিয়ে (বাইপাস করে) এই সংশোধনী আনা হয়।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানে একক কোনো ব্যক্তি প্রাধান্য নেই, ব্যক্তিপূজার সুযোগ নেই।

তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) সরকারের মাধ্যমে দেশে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিলোপ করায় বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কেয়ারটেকার বাতিল করে দেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। সংবিধানের বুকে কুঠার আঘাত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসঙ্গ টেনে শুনানির একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এই নয় যে, হাজার হাজার মানুষকে গুম করা। বিচারবহির্ভূত খুন করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা নয় যে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এগুলো হতে পারে না।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা জাতির পিতার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। ওনার অবদান অনস্বীকার্য। তবে আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় আমরা (উই) বলা হয়েছে। সেখানে একক কোনো ব্যক্তি প্রাধান্য নেই, ব্যক্তিপুজার সুযোগ নেই।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মানুষকে ভয়ের সংস্কৃতিতে রাখা, মানুষের কণ্ঠরোধ করা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দূরে রাখতেই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (এ) (বি) আনা হয়েছে। এটি মৌলিক অধিকারসহ সংবিধানে থাকা নাগরিকদের অধিকারকে আঘাত করেছে। পার্লামেন্টের সুপ্রিমেসিকে আঘাত করেছে। ডিকটেটরশিপকে টিকিয়ে রাখার জন্যই এটি করা হয়েছে।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধানটি বাতিল করে মৌলিক বিষয়ে জনগণের মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি গণভোটের বিধানটি পুনর্বহালের পক্ষে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরেন।

এদিন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলের পঞ্চম দিনের শুনানি শেষ হয়। এদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির পর শুনানি শুরু করেন জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শুনানিতে সুজনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। ইনসানিয়াত বিপ্লব দলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুর রউফ ও ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আরও ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এছাড়া, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।

এফএইচ/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।