খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা আইসিটি মামলা বাতিল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলা বাতিল করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির বিরুদ্ধে ৬ মামলা বাতিল করেছেন আদালত।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বযে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে এ মামলা হয়। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীকে আসামি করে এ মামলা করেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের।
বাদীর আইনজীবী সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম জানান, ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী (২০১৬ সালের) ২৫ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত পেজে ইংরেজিতে একটি পোস্ট দেন। এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যা সম্ভব নয়, কারণ শেখ হাসিনার চারদিকে ভারতের বিশেষ নিরাপত্তার চাদর রয়েছে। ভারতীয়রা সরাসরি শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিধান করেছে। কারণ শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা ছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণতন্ত্র ফেরানো সম্ভব নয়।’
- আরও পড়ুন
সংবিধানে গণভোটের বিধান চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
ব্যারিস্টার খোকনসহ বিএনপিপন্থি ৬৬ আইনজীবীকে অব্যাহতি
ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীর এ ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। নিশ্চয়ই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুমতিক্রমে তিনি এ পোস্ট দিয়েছেন। তাই এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে।
এর আগে ওই বছরের (২০১৬ সালের) ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আরেক মামলা হয়। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও আনা হয়।
গত ৩০ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও রাজধানীর দারুস সালাম, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ১১টি মামলা বাতিল করেন হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়।
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনাসভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লাখ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন বই-কিতাবে নানান রকম তথ্য আছে।’
এরপর ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ মনোভাব পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে তা প্রত্যাহার করতে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান তিনি। পরে ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২৪ জানুয়ারি এ অনুমোদনের চিঠি হাতে পেয়ে ২৫ জানুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।
এফএইচ/কেএসআর/জেআইএম