জামায়াতের নিবন্ধন: খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৩ এএম, ২২ অক্টোবর ২০২৪

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

একই সঙ্গে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রেও তাদের বিলম্ব মার্জনা করেছেন আদালত। এর ফলে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের ওপর পুনরায় শুনানি হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। জামায়াতের নিয়োগ পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে আজ জামায়াতের পক্ষে আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও মতিউর রহমান আকন্দ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আলী আজম। ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক ছাড়াও শুনানিতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ড. চৌধুরী ব্যারিস্টার আহমেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট রায়হান উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল্লাহ।

আদেশের বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, বিলম্ব মার্জনা করে আপিল পুনরুজ্জীবিত করার অনুমতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আমরা পরবর্তীতে এ আপিল শুনানির জন্য নিয়ে আসবো। এ মামলার আপিলকারী মৃত্যুবরণ করায় নতুন আপিলকারী তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। এরপর নতুন করে আপিল শুনানির জন্য আবেদন করা হবে।

শিশির মনির বলেন, আজকে আমাদের আপিল পুনরুজ্জীবিত হলো, পরবর্তীতে আমরা আপিলটি প্রতিস্থাপন করবো। এই মামলার যিনি আপিলকারী ছিলেন, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল যিনি আছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তার স্থলাভিসিক্ত হওয়ার পরেই আপিলের দিনক্ষণ শুনানির জন্য নির্ধারণ হতে পারে।

শিশির মনির বলেন, জামায়াতের আপিল শুনানির জন্য যেদিন ধার্য ছিল ওইদিন দেশব্যাপী হরতাল ছিল। যার কারণে সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত হতে পারেননি। তখন আমাদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। বিষয়টি আবেদন দিয়ে জানানো হয়েছিল। আপিল শুনানি মুলতবি রাখার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তারপরও আপিল বিভাগ ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসেবে আপিলটি খারিজ করে দিয়েছিলেন। আমরা বলেছি একজন সিনিয়র আইনজীবী নিরাপত্তার কারণে আদালতে না আসলে এই রকম একটি সার্টিফিকেট আপিল, যেখানে সাংবিধানিক ব্যাখার প্রয়োজন। হাইকোর্ট মনে করেছেন সাংবিধানিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন সেটি এভাবে শুনানি ছাড়া, একতরফাভাবে ডিসমিসড ফর ডিফল্ট করা যায় না। আমরা আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেছিলাম। আমাদের আর্গুমেন্ট আপিল বিভাগ মঞ্জুর করেছেন এবং আপিল পুনরুজ্জীবিত করেছেন।

তিনি বলেন, এটি একটি সার্টিফিকেট আপিল। হাইকোর্ট বিভাগই সার্টিফিকেট দিয়েছিল যে এখানে সাংবিধানিক ইস্যু জড়িত। লিভ টু আপিল না করে সরাসরি আপিল করা যাবে। হাইকোর্ট বিভাগ যেখানে সার্টিফিকেট দিয়েছেন,এ ধরনের মামলা শুনানি ছাড়া খারিজ করা যায় না। এজন্য আমাদের বিলম্ব মার্জনা করেছেন ও আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার জজ আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে তা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ধার্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সেটি তালিকায় ওঠে। আদালতে ওইদিন জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারী পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ওইদিন আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। আপিলটি পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল আবেদন করেন, যা ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সেদিন তিনি বলেন, আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে করা আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন চেম্বার জজ আদালত। পুনরুজ্জীবিত চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর হলে আপিলের ওপর শুনানি হবে।

এর আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।

একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা পরবর্তী সময়ে আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। এর আগে রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

এরপর জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের গত ২৮ আগস্ট জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এতে আরও বলা হয়, সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৮(১) ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত ১ আগস্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল করলো।

এফএইচ/ইএ/এসআইটি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।