তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর রিভিউ আবেদন শুনানি ২৪ অক্টোবর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৪ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪
ফাইল ছবি

ত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা পৃথক দুটি রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

রোববার (২০ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে এ বিষয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়।

আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ১৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে রিভিউয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এরও আগে গত আগস্ট মাসে পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক একই বিষয়ে রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন। রিভিউতে পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন আবেদন করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করেন।

রিভিউকারীদের আইনজীবী শরীফ ভূইয়া সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য দায়ের করা আবেদন শুনানি শেষে আদালত তাদের অনুমতি দেন।

আইনজীবী শরিফ ভূইয়া বলেন, এটি সাংবিধানিক ভুল। যার কারণে বাংলাদশের নাগরিকদের কাছ থেকে ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিগত ১২ বছর এ রায়ের রিভিশনের জন্য কেউ আসেনি। আপিল বিভাগ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে এ সংশোধনী পুনরায় বিবেচনা করবেন বলে প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক স্বার্থপ্রণোদিত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়াতেই পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছিলেন। যার পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়। তাই আমরা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছি।

২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আদালত।

রায়ে বলা হয়, এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

আদালত তার রায়ে বলেন, আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন—সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে।

এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে।

একই সঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপিলটিও খারিজ করা হলো।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এরপর ২০০৫ সালে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল করেন অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ। আদালত এ মামলায় আটজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন। এদের মধ্যে পাঁচজন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এরা হলেন- ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অপর আমিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন।

এফএইচ/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।