১৫ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি: আদিলুর রহমান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র বলেছেন, বিগত ১৫ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। ভয়ের সংস্কৃতি ভয়ের শাসন ও ফ্যাসিবাদের কারণে স্বাধীনভাবে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) কারা অধিদপ্তরে ‘কারাগার সংস্কার: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আইন, বিচার মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) ও কারা অধিদপ্তর যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।

এলআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাভেদ আখতার এবং নিউ এজ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক শহীদুজ্জামান।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন কারা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ‘জেল সংস্কার: সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও প্রস্তাবনা’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

কর্মশালায় উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস। আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির ও সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক মো. শামসুল হায়দার সিদ্দিকী।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, মানবাধিকার নিয়ে রিপোর্ট করায় দুবার জেলে যেতে হয়েছে। প্রথমবার তুলে নেওয়া হয় এবং রিমান্ডে শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। দ্বিতীয়বার মামলায় দুই বছরের দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, কারাগারগুলোকে সংস্কারের চেষ্টা করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তার জেল কোড যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করবেন। দেশে বহু নির্যাতিত মানুষ। আদালত থেকে নির্যাতিত মানুষ যেন বিচার পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশের জেল কোড ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে কারা সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে কারাগার আমাদের সমাজেরই অংশ। কারাবন্দি একজন মানুষের শুধু ফ্রিডম অব মুভমেন্ট থাকবে না। তার ভোটাধিকার বা অন্যান্য ফ্রিডম রেসট্রিকটেড থাকবে না।

ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, কারা আইন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। মানবিকভাবে কারাগারগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। জেল কোড ও দণ্ডবিধি সংশোধন করে যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি।

তিনি তার কারাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। কারাগারের ভেতরে দুর্নীতি ও বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরেন ব্যারিস্টার কাজল। তিনি বলেন, কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে সত্যিই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও প্রয়োজন। কারা ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী করতে হলে সংশ্লিষ্টদের তেলবাজি ও দলবাজি পরিত্যাগ করতে হবে।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৭টি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে সব কারাগারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে এখন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে। কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক থাকে বিভিন্ন সময় যা অমানবিক। এটি সমাধান জরুরি।

কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির বিদ্যমান কারাগার ব্যবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এর মধ্যে বন্দির তুলনায় অপ্রতুল স্থান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও ব্যবস্থা না থাকা। পাশাপাশি কারা কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধায় রয়েছে নানা বৈষম্য। এসব বৈষম্য নিরসনে গুরুত্ব দিতে হবে।

কর্মশালায় মূল প্রস্তাবনা তুলে ধরে বক্তৃতা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি বলেন, কারাগার মূলত সংশোধনাগার। কারাগারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধীর সংস্কার বা সংশোধন। বর্তমানের কারাগার ব্যবস্থা সংশোধন মূলত তত্ত্বনির্ভর। জেলগুলো মূলত ১৮৬০ সালের জেল কোড, দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ও দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব আইন ঔপনিবেশিক আমলে আনা এসব আইন সংশোধন করে জেল ব্যবস্থা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় জেল কোডে নেই। আবার বিদ্যমান আইনে রয়েছে এমন অনেক সুবিধা কার্যকর ও প্রয়োগ হচ্ছে না। এটির সমাধান জরুরি।

শিশির মনির বলেন, বন্দিদের কনডেম সেলে রাখা হয়, যখন তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়ে। এ ধরনের বন্দিদের মনস্তাত্ত্বিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়, তাই এটি আইনের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে এবং বন্দির মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান রাখতে হবে। হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না।

শিশির মনির আরও বলেন, বন্দিদের জন্য স্বামী-স্ত্রীর সহবাস ও প্রজননের অধিকার একটি মানবিক প্রয়োজন। এই অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও মানবিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সম্ভব।

তিনি বলেন, কারাগার সংস্কার অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরোনো আইন এবং জেল কোডের সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার, মানবাধিকার এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমের সমন্বয় করে জেল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এফএইচ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।