সাগর-রুনি হত্যা
তদন্ত থেকে র্যাবকে বাদ দেওয়ায় খুশি বাদী নওশের রোমান
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেকে র্যাবকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশে খুশি হয়েছেন মামলার বাদী নওশের রোমান।
তিনি বলেন, র্যাবকে বাদ দেওয়ায় আমরা খুশি। আসলে র্যাব শুরু থেকেই তদন্তের কিছুই করেনি। প্রথমদিকে আমাদের প্রেশারাইজ করেছে। পরে কোনো কাজই করেনি। এমনকি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে তাদের মেয়ে কেমন আছে। তাদের যে ছেলে সন্তান সেটিও র্যাব জানতো না।
নওশের রোমান বলেন, স্পেসিফিক কোনো বাহিনীকে না নিয়ে বিভিন্ন যারা দক্ষ তাদের দিয়ে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে এতে আমরা আশার আলো দেখছি। মনে করি এবার কিছু একটা হবে। সরকার আন্তরিক।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে সরিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশ (২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল দেওয়া) সংশোধন চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী বছরের ৬ এপ্রিল দিন রেখেছেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব ও মহাদ্দেস–উল–ইসলাম। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এটি র্যাব তদন্ত করছিল। রাষ্ট্রপক্ষ একটি আবেদন করেছিল। আদালত শুনানি শেষে র্যাবের কাছ থেকে তদন্ত প্রক্রিয়াটা সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে, অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
- আরও পড়ুন
- ‘ধামাচাপা দিতেই সাগর-রুনি হত্যার তদন্তভার র্যাবে’
- টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ: সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে সরানো হলো র্যাবকে
- সাগর-রুনি হত্যা: শিশির মনিরসহ ৯ আইনজীবীকে মামলা পরিচালনার অনুমতি দিতে আবেদন
তিনি বলেন, এখন আর র্যাব তদন্ত করতে পারবে না। আশা করা যায় এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রহস্যের উন্মোচন হবে।
শিশির মনির আরও বলেন, কোর্ট বলেছেন- এটা শুধু পরিবারের জন্যই দুঃখজনক নয়, ১২ বছর ধরে একটি মামলার তদন্ত শেষ করা যায় না। এটি জাতির জন্য দুঃখজনক। বিচার ব্যবস্থার জন্য এটা শকিং।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।
দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে প্রায় ১২ বছরে ১১১ বার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
এ মামলার তদন্ত নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া এক অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ফৌজদারি মামলার তদন্ত কাজ যেন দীর্ঘদিন ঝুলে না থাকে পুলিশকে সে ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য এরই মধ্যে ১১১ বার সময় নেওয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্ত কাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা সময়ের আবর্তে মামলার অনেক সাক্ষী ও সাক্ষ্য হারিয়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আশার আলো দেখতে শুরু করেন মামলার বাদী নিহত রুনির ভাই নওশের রোমান। মামলা লড়তে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিযুক্ত করেন তিনি।
এফএইচ/বিএ/এএসএম