শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র’ মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করেছেন আদালত।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক এই আদেশ দেন।
শফিক রেহমান আজ আইনজীবীর মাধ্যমে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তিনি সাজার বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের জন্য মামলার নকল বা অনুলিপি সংগ্রহ এবং তার বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা রি-কলের আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেন।
শফিক রেহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘গত ২২ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক শফিক রেহমানের সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। আত্মসমর্পণপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে এ সাজা স্থগিত করা হয়। শফিক রেহমান আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে মামলার নকল ও তার বিরুদ্ধে দেওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ফেরতের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আমরা খুব দ্রুত আপিল ফাইল করবো।’
গত ২২ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে এ সাজা স্থগিত করা হয়।
- আরও পড়ুন
- এবার আত্মসমর্পণ করলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
- সাংবাদিক শফিক রেহমানের সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত
‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র’ মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো আদালত যদি এক বছরের বেশি কারাদণ্ডাদেশ দেন তাহলে তিনি এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। এ আদালত থেকে গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। এক ধারায় পাঁচ বছর, আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এ আদালত এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। আমরা অতি দ্রুত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মাহমুদুর রহমানের জামিন আবেদন করবো। আশা করি তিনি জামিন পাবেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
রায়ে আদালত অপহরণচেষ্টার দায়ে আসামিদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি হত্যার ষড়যন্ত্র করার দায়ে আসামিদের দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও একমাসের কারাদণ্ড দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ দলটির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে ষড়যন্ত্র করেন। তারা আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।
এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
জেএ/এমএমএআর/জিকেএস