নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল
মানবতাবিরোধী মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন।
আদালতের নিজামীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান, ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ছেলে এহসান এ সিদ্দিকী। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল হক টুটুল।
উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাইল হক, মিয়া ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সদস্যসহ প্রায় শতাধিক আইনজীবী এবং শতাধিক সাংবাদিক। এর আগে নিজামীর রিভিউ মামলাটি আদেশের জন্য বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এক নম্বরে ছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, এখন রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করবে। তবে নিজামীর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চায় তাহলে কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করবে।
নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আগামী ৫ মে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একই বেঞ্চ।
গত ৩ মে মঙ্গলবার সকাল থেকে নিজামীর খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে, মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। মাঝে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ মে দিন ধার্য করে আদেশ দেন।
গত ১০ এপ্রিল নিজামীর রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) শুনানির জন্য ৩ মে নির্ধারণ করেন আদালত। গত ৩ মে মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন। নির্ধারিত দিনে আজ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
এর আগে গত ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউতে ৭০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাইন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়।
পরের দিন ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ নিজামীর রিভিউ আবেদন দ্রুত শুনানির জন্য দিন ধার্যে আবেদন দাখিল করে। গত ১০ এপ্রিল বিষয়টি ৩ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানি দেয়াসহ তিন অপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন করার পর রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠায়।
গত ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় শোনানো হয়। এর আগে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীর মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
তার আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার এক মামলায় নিজামীকে আটক করা হয়। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জেলে পাঠানো হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এফএইচ/জেএইচ/এএইচ/আরআইপি