তাজুল ইসলাম

ছাত্র আন্দোলন দমাতে পুলিশের পোশাকে হিন্দিভাষীরা গুলি চালান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫২ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম/ ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশের পোশাকে অন্য দেশের নাগরিকদের থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লব চলাকালে পুলিশের পোশাক পরা হিন্দিভাষীরা অতি কাছ থেকে গুলি করেছেন। তারা হিন্দিতে ছাত্রদের গালাগাল করেন। তাদের আক্রমণে ছিল অসম্ভব নিষ্ঠুরতা। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থার টিম।’

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীনদের দেখতে এসে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করে অন্য কোনো দেশের নাগরিকরা যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন, তাদের বিচারের ক্ষমতাও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনে পুলিশের বর্বরতার কথা প্রসিকিউশন টিম এবং তদন্ত সংস্থার কাছে তুলে ধরেন পুলিশের গুলিতে আহতরা। রাজধানীতে ঘটে যাওয়া অতিসংবেদনশীল ঘটনার তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার পাবে।’

তিনি বলেন, ‘যে কোনো দেশের নাগরিক যদি এই দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও তদন্ত হবে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। বেশ কয়েকজন আহত ছাত্র-জনতা, যাত্রাবাড়ী,গাজীপুর এবং মাওনাতে যারা ছিলেন তাদের কাছ থেকে প্রমাণ পাচ্ছি যে, তাদের কাছে এসে খুব কাছ থেকে পুলিশের পোশাক পরে যারা গুলি করেছেন তারা বাংলা ভাষায় কথা বলেননি। তারা হিন্দিতে কথা বলেছেন, গালাগাল করেছেন। তাদের আচরণ ছিল অসম্ভব ব্রুটাল। আমরা এটি পর্যালোচনা করবো। পর্যালোচনা করে আমাদের আইনে যে দেশের নাগরিকই হোক, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, এই আদালতের সেটির বিচারের ক্ষমতা রয়েছে।’

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত ব্যক্তির গলার ওপর পা চেপে ধরে ঘাড়ের হাড় ভেঙে ফেলা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি এখন চিকিৎসাধীন।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হচ্ছে যে, একজন গুলিবিদ্ধ আহতকে কোলে নিয়ে বসে থাকা অবস্থায় ওই আহতের গলায় পাড়া দিয়ে গলার হাড়া ভেঙে ফেলেছে। আমরা এমন এমন ঘটনা জানতে পেরেছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ভুক্তভোগীদের বিস্তারিত তথ্য তদন্ত সংস্থা কর্তৃক রেকর্ড বা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আন্দোলনে আহত প্রায় ৯০০ জনের চিকিৎসা হয়েছে এখানে (নিটোর)। আহতরা বিভিন্ন সময় চিকিৎসা নিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন। পাঁচজন চিকিৎসারত অবস্থায় এখানে মারা যান। এই হাসপাতালে দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এখানো ৬৮ জন চিকিৎসাধীন। আমরা ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছি ও তাদের বক্তব্য নিয়েছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ভিকটিমদের বিস্তারিত তথ্য আমাদের তদন্ত সংস্থা আগামী দুই দিনের মধ্যে রেকর্ড বা সংরক্ষণ করবে।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আহতদের শরীরে যেসব বুলেট লেগেছিল, যেগুলো অপসারণ করা হয়েছে, সেগুলো দেখেছি। আন্দোলনকারীদের ওপর বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা গুলি করেছেন।’

বিদেশি ভাষায় কথা বলে ভিকটিমদের ওপর হামলার বিষয় উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সরকারপক্ষের প্রধান আইনজীবী বলেন, ‘ভিকটিমরা বলেছেন, বিদেশি ভাষা হিন্দিতে গালি দিয়েছে, কাছে এসে গুলি করেছে। ভিকটিমদের ওপর হামলা করেছে। ভিকটিমরা বলছেন, বিদেশি সৈন্যবাহিনী তাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছি। আইন অনুযায়ী বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা মামলার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।’

এফএইচ/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।