আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনে আট খসড়া প্রস্তাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৫ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

অপরাধ করলে রাজনৈতিক দলকে ১০ বছর নিষিদ্ধসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আটটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনীতে ৪এ, ১৩এ ও ২০এ নামে তিনটি নতুন ধারা এবং ৩(৩) ও ১২(২) নামে দুটি নতুন উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধারা ৩(২)(এ), ৪(২) ও ১৯ ধারায় সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‌‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ সংশোধনবিষয়ক একটি মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সভায় বিচারে স্বচ্ছতা আনতে সরাসরি সম্প্রচারে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

খসড়া প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, গুম ও জোরপূর্বক যৌনকর্ম এ আইনের আওতায় রাখা হয়েছে। কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি অপরাধ হবে জেনেও সেই কাজ করলে আইনের আওতায় আনা। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ ভিডিও বা অডিও রেকর্ডের সুযোগ রাখা হবে। অভিযুক্ত চাইলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ডিজিটাল স্বাক্ষরকে এ বিচারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইনে কোনো দল অপরাধ করলে ১০ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ রাখাসহ আটটি খসড়া প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, অতীতে দেখেছি এ দেশে বিচারের নামে কি ধরনের অবিচার হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ও বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে সচল করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বোর্ডকে (ট্রাইব্যুনাল) পুনর্গঠন করা। আমরা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের সংস্কার কার্যক্রম এখানেই থেমে থাকবে না। যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদের সবার মতামত নিয়ে এ আইন সংশোধন করা হবে।

এর আগে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে সভায় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী উপস্থাপন করা হয়।

প্রথম সংশোধনী ধারা-৩ সংক্রান্ত: এ সংশোধনীর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় একটি ব্যাপক ও সিস্টেমেটিক আক্রমণের অংশ হিসেবে গুম, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, যৌনদাসত্ব, জোরপূর্বক যৌনকর্ম ও গর্ভধারণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীর ফলে জেন্ডার ও কালচারাল গ্রাউন্ডেও যদি কোনো সিভিলিয়ানের ওপর ব্যাপক ও সিস্টেম্যাটিক আক্রমণ করা হয় তাহলে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যা আগের আইনে ছিল না।

দ্বিতীয় সংশোধনী ধারা-৩(৩) সংক্রান্ত: এ সংশোধনীর ফলে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি অপরাধের দায় নির্ধারণ করতে ট্রাইব্যুনাল রোম স্ট্যাটিউটের ধারা-৯ অনুযায়ী গৃহীত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিবেচনার সুযোগ পাবে।

তৃতীয় সংশোধনী ধারা-৪(২) সংক্রান্ত: এ সংশোধনীর ফলে এ আইনের অধীনে অপরাধ হতে পারে এটি জানা সত্ত্বেও যদি কোনো সংস্থা, সংগঠন, দল, সংঘবদ্ধ চক্র বা সত্ত্বার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় তাকেও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে, যা বর্তমান বিধান অনুসারে সম্ভব নয়।

চতুর্থ সংশোধনী: এ সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যকর ভিডিও স্ট্রিমিং বা অডিও-ভিজ্যুয়াল রেকর্ডিং এর সুযোগ রাখা হয়েছে। এ সংশোধনীর বুনিয়াদে বিচারকার্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে।

পঞ্চম সংশোধনী: এ সংশোধনীর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অভিযুক্ত চাইলে তার পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন।

ষষ্ঠ সংশোধনী: বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা ত্বরান্বিত করবে। এ সংশোধনীর অধীনে ট্রাইব্যনালের অনুমতি সাপেক্ষে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

সপ্তম সংশোধনী: এর মাধ্যমে প্রায় সব রকম ডিজিটাল সাক্ষ্যকে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অষ্টম সংশোধনী: প্রস্তাবিত এ সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল যদি এ আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করে তাহলে সে দলকে ১০ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে।

আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ; শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান; আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম রব্বানী; লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী; নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার; সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না; সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ; সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম; আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (মতামত) এস. এম. সাইফুল ইসলাম; যুগ্ম-সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন; অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দীকা; রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব (ড্রাফটিং) মো. রফিকুল হাসান; আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া; সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট ড. জাহেদুর রহমান; সানজিদা ইসলাম; শরিফ ভূঁইয়াসহ প্রমুখ নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন।

এফএইচ/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।