গাজীপুরে ওসির রিসোর্টকাণ্ড
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার আলোচিত সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলামের রিসোর্টকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘গাজীপুরের ওসির রিসোর্টকাণ্ড: সাবেক এসপিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার আলোচিত সাবেক ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের এক কলেজ ছাত্রীকে রিসোর্টে রেখে রাত্রিযাপনের ঘটনায় গাজীপুরের একটি আদালতে মামলা হয়েছে।
গাজীপুরের সাবেক এসপিসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা ও স্টেনোগ্রাফারের বিরুদ্ধে গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। কমিশন মনে করে, বর্ণিত ঘটনায় অভিযুক্ত ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।
এছাড়া বর্ণিত ঘটনায় গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে মর্মে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে। উক্ত ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উদ্বেগ প্রকাশপূর্বক স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সুয়োমটোর বিষয়বস্তুতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে উক্ত নারীর ফোন পেয়ে গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে তাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। পরে ধর্ষণ মামলা থেকে রক্ষা পেতে গাজীপুরের সাবেক এসপি কাজী শফিকুল আলম ও ডিবি পুলিশের ওসি দেলাওয়ার হোসেনের পরামর্শে ওই ওসির প্রথম স্ত্রীর উপস্থিতিতে ১৮ জানুয়ারি উক্ত কলেজছাত্রীকে বিয়ে করেন ওসি সৈয়দ মিজানুর রহমান। বিয়ের পর ওসি মিজান একদিনের জন্যও ছাত্রীর সঙ্গে সংসার করেননি এবং কোনো খোঁজখবর নেননি। ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্ট করে গত এপ্রিলে ওই কলেজছাত্রীকে গোপনে একতরফা তালাক প্রদান করেন ওসি মিজান।
প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ওসি মিজানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে এসপি কাজী শফিকুল আলম তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন, মিরাজুল ইসলাম ও ওসি ডিবিকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ওসি মিজান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দায়সারা রিপোর্ট প্রদান করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।
এ বিষয়ে কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, পুলিশের ওসি পদে দায়িত্বরত থেকে নিজ স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও পরকিয়া করে একটি নারীকে নিয়ে রিসোর্টে যাওয়া শুধু শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয় নয়, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধও বটে। সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মদদে বিয়ের নামে প্রহসন করে অভিযুক্তকে অপরাধ থেকে বাঁচানোর প্রবণতায় আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে বিয়ের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তালাক প্রদান করে ভুক্তভোগীকে তার স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
এমতাবস্থায়, অভিযুক্ত ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দায়ের হওয়া মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি কমিশনকে অবহিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলা হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।
এফএইচ/ইএ/এএসএম