ফারহান হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ফারহানের বাবা শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এই অভিযোগ দাখিল করেন। এসময় ফারহানের মা ও বোন উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই সকাল থেকেই রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর এলাকায় রাপা প্লাজার সামনে মূল সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। যেখানে ধানমন্ডি এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজও অংশ নেন। সকাল থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
আরও পড়ুন
সেই সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজ দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন। ফারহানের বন্ধুরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে লালমাটিয়ায় অবস্থিত সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২৩ থেকে ৫৪ ক্রমিক নম্বর আসামিরা ১৮ জুলাই দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সরাসরি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন এবং গুলিবর্ষণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফারহান সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ দেওয়া হলো।
অপরাধের ধরনে যা বলা হয়েছে
আসামিদের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে অন্য আসামিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূলের উদ্দ্যেশে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সাধারণ নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্যাতন, আটক, গুম করার অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ফারহান ফাইয়াজকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করা হয়েছে।
যাদের আসামি করা হয়েছে
আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মোহাম্মদপুর জোনের তৎকালীন ডিসি এইচ এম আজিমুল হক, এডিসি রওশানুল হক সৈকত, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন, এসআই শাহরীয়া আলম, ওসি মাহফুজুল হক ভূইয়া, ধানমন্ডি থানার ওসি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জহির উদ্দিন আহমেদ ওরফে বিচ্ছু জালালসহ ৫৪ জন।
তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১) (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস