পোশাকশ্রমিক হত্যা

গোলাপ-ফারজানা রুপা-শাকিল রিমান্ডে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৪
ফাইল ছবি

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সাত ও একাত্তর টেলিভিশন থেকে চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ এবং প্রিন্সিপাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রুপার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আর আগে রোববার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে গোলাপকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশ।

এদিন পোশাকশ্রমিক ফজলুল করিম হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে ফারজানা রুপা ও শাকিলকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন পূর্বক দশ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।

গত বুধবার (২১ আগস্ট) শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে ডিবিতে হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আদালতে হাজির করে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় গার্মেন্ট কর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মদ হুমায়ুন কবির তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ৮ আগস্ট একাত্তর আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়। গত ২২ আগস্ট পোশাক শ্রমিক রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি করেন।

বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন যে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের মদতে সরকারি চাকরিতে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বহালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের মদতপুষ্ট অনুগতদের চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ প্রদানের চক্রান্ত ও অপচেষ্টা করলে দেশের সমগ্র ছাত্র সমাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই বৈষম্যমূলক অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ গন আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে অভিহিত করে।

শেখ হাসিনা এরূপ উদ্দেশ্যমূলক ঘৃণ্য মিথ্যা, কুৎসা ও উৎকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুভূতিতে আঘাত করে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উসকে দিয়ে সারাদেশে সহিংস আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।

১৪ নম্বর আসামির দিক নিদের্শনায় বিগত ১৫ জুলাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যলয়ে ২ নম্বর আসামিসহ ২২ নম্বর থেকে ৯৬ নম্বর আসামিরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর গুরুতর রক্তাক্ত আঘাত, অঙ্গহানী, নারীর শ্লীলতাহানিসহ নারকীয় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনে অপরাধমূলক পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। উক্ত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে ২ নম্বর আসামি গণমাধ্যমে আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জবাব ও মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আসামি সাদ্দাম হোসেন বিগত ১৫ জুলাই তারিখে ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হুমকি দিয়ে বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব।

এছাড়াও বিগত ১৫ জুলাই আসামি তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উসকানি দিয়ে বলেন রাজাকারের দল তোরা, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ছাড় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২ নম্বর আসামি বিগত ১৭ জুলাই ঢাকা জেলা ও মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামীলীগ এর সন্ত্রাসীদের ছাত্রজনতার ওপর হামলা, গুম, খুন সহ সহিংসতা ছড়ানোর জন্য বলেন। ২৬ নম্বর আসামি অন্যান্য আসামিদের অপরাধ কার্য নির্বিঘ্নে সংঘটিত করার লক্ষ্যে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করার নিমিত্তে সারাদেশে একযোগে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখেন।

উপরোক্ত আসামিদের অবৈধ ও বেআইনি দিক নির্দেশনা এবং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট মিছিলে উপস্থিত নিরস্ত্র ছাত্র জনতার মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুলি ছুড়লে বাদীর ছেলের গুলিবিদ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জেএ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।