গ্রেফতার-রিমান্ডে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন দাবি ব্লাস্টের
সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় বিশেষ করে নারীদের গ্রেফতার ও রিমান্ড প্রদানের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। একই সঙ্গে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি জানায় ব্লাস্ট।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সময় বিভিন্ন মামলায় নারীদের গ্রেফতার ও রিমান্ড প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানছেন না।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ৩১ (আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার), ৩২ (জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ), ৩৩ (গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ) এবং ৩৫ (বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ) সমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
একই সঙ্গে, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা সংবলিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যুগান্তকারী রায়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
>> কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক গ্রেফতার ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে গ্রেফতারের বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব কিন্তু অনধিক ১২ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
>> ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ব্যক্তিকে রিমান্ড বা হেফাজতে নিতে হলে কিংবা বিচারিক হেফাজত তথা কারাগারে প্রেরণ করতে হলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা আবশ্যক।
>> কাউকে গ্রেফতা করার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তার নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
>> যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তিনি অথবা গ্রেফতারের স্থানে যারা উপস্থিত রয়েছেন তারা দেখতে চাইলে গ্রেফতারকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই তার পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে।
>> গ্রেফতার ব্যক্তির শরীরে কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলে গ্রেফতারকারী কর্মকর্তা এ ধরনের আঘাতের কারণ ও বিবরণ লিপিবদ্ধ করে তাকে নিকটতম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করবেন এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করবেন।
>> গ্রেফতার ব্যক্তিকে তার পছন্দের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার কিংবা স্বজন বা নিকটজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশিকা ‘অপরাধ তদন্ত নির্দেশিকা’ এর অধ্যায় ৬.৬-এ নারীদের গ্রেফতার সংক্রান্ত কিছু বিধান উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, নারীদের গ্রেফতারের সময় পুলিশকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং তদন্তের সময় তাদের সম্মান ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এ মতাবস্থায়, যেকোনো পরিস্থিতিতেই যেন গ্রেফতার ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনার লঙ্ঘন না হয় এবং বিচার পাওয়ার অধিকার যেন নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায় ব্লাস্ট।
এফএইচ/ইএ/এএসএম