টুকু, পলক ও সৈকতকে ডিম-জুতা নিক্ষেপ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রিমান্ড শুনানির আগে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে তাদের আদালতে তোলা হয়। এসময় তাদের লক্ষ্য করে ডিম-জুতা নিক্ষেপ করা হয়। এরপর রিমান্ড শুনানি শেষে হাজতখানার গেটের সামনে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে একটি ডিম টুকুর হেলমেটে লাগে। আর জুতা লাগে পলকের গায়ে।

এর আগে বিকেলে তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রিকশাচালক হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। এসময় আসামিদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দশদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটের দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণে তাদের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে দশদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর তাদের হাজতখানায় নেওয়ার সময় ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন আইনজীবীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, টুকু, পলক ও সৈকতকে লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে একটি ডিম টুকুর হেলমেটে লাগে। জুতা লাগে পলকের গায়ে।

টুকু-পলক-সৈকতের নির্দেশে গুলি

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। কোটাবিরোধী আন্দোলনে তাদের নির্দেশে ও হুকুমে সারাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি করে দুষ্কৃতকারীরা। এতে রাজধানীর পল্টনে বাদীর স্বামী কামাল মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।

এর আগে বুধবার (১৪ আগস্ট) রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর এ তিন নেতাকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর পল্টন থানা এলাকায় গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক কামাল মিয়া (৩৯)। এ ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে ২০ জুলাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৩৬)।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্বামী কামাল মিয়া (৩৯) পেশায় একজন রিকশাচালক। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিবেশীর মাধ্যমে জানতে পারি, আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পল্টন মডেল থানার বটতলা গলির মুখে পড়ে আছে। তখন আমি ও আমার মেয়ে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার বাদী এজাহারে আরও বলেন, ঘটনাস্থলের স্থানীয় লোকজনদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ওই স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে আগুন দেয় এবং বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। তখন কাকরাইল থেকে পল্টন থানায় আসার পথে একজন পুলিশকে দুষ্কৃতিকারীরা আটক করে মারধর করে। তার কাছে থাকা সরকারি পিস্তল ও গুলি, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। তখন পল্টন থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দুষ্কৃতকারীদের ধাওয়া করে। এসময় দুষ্কৃতকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পুলিশ ও দুষ্কৃতকারীদের ধাওয়া পাল্ট ধাওয়ার মাঝে পড়ে যান রিকশাচালক কামাল মিয়া। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আহত হন কামাল মিয়া।

গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

জেএ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।