হাইকোর্ট

যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে সবাই অপরাধী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২৪
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে থেকেও গুলিতে শিশু নিহত হওয়ার কারণ জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে আর্জি জানিয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ দিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন আদালত।

শুনানিকালে উচ্চ আদালত বলেন, যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে তারা সবাই অপরাধী। বলা যায় আমরা যারা এই সিস্টেমের সঙ্গে ছিলাম তারা সবাই অপরাধী।

এ সময় হাইকোর্ট জানান, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপনে আন্দোলনকারীদের দোষী করা হয়েছিল।

বুধবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কার গুলিতে শিশু নিহত হয়েছে- এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানিতে এ মন্তব্য করেন আদালত। এ বিষয়ে তদন্ত কমিশন গঠন চেয়ে করা রিটের আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

এর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে বা তার আশপাশে গুলিতে শিশু নিহত হওয়ার কারণ কী- তা জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতেও রিটে আর্জি জানানো হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে যদি অন্য কোনো শিশুর মৃত্যুর সন্ধান পাওয়া যায় তবে তার পরিবারকেও এই ক্ষতিপূরণের আওতাভুক্ত করা হবে।

আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে এবং বাড়ির আশেপাশে নিহত শিশুদের নাম যুক্ত করা হয়েছে রিটে। তারা হলো- আব্দুল আহাদ (৪), রিয়া গোপ (৬), সাফকাত সামির (১১), নাইমা আক্তার সুলতানা (১৫), ইফাত (১৬), আহমিদ (১৪) ও মোবাররক (১৩)।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘জানালার পাশে এসে দাঁড়াতেই গুলি এসে কেড়ে নিলো শিশুটিকে’, ‘বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি’, ‘বারান্দায় দাঁড়ানো আহাদের ডান চোখে লাগে গুলি’ এবং আরেক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরলো ওরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়। আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ৩১ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেন।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিাবদী করা হয়েছে।

আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের কনভেশন ও সংবিধান অনুযায়ী শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো শিশুকে বিনা কারণে হত্যা করা হয়েছে কি না, সেটা নিয়ে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে রিটটি করেছি।

তিনি বলেন, রিটে শিশুদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বিকেলে আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার এক বাড়িতে গুলি লাগে শিশু আহাদের (৪)। আহাদ তাদের বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে যায়। আহাদের বাবা আবুল হাসান আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী। তার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।

একই দিন নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলি লাগে রিয়া গোপের (৬)। বাসার সামনে হইহুল্লোড় শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

এদিকে মিরপুর ১৪ নম্বরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারে সাফকাত সামির (১১) ও তার চাচা মশিউর রহমান (১৬) বাসার বেডরুমে জানালার পাশে টেবিলে বসে পড়াশোনা করছিল। এসময় দুষ্কৃতকারীর একটি গুলি মশিউরের ডান কাঁধ ভেদ করে সামিরের ডান চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। সামিরকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।

এছাড়া রাজধানীর উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বাসার চারতলার বারান্দায় গুলিতে নিহত হয় নাইমা আক্তার সুলতানা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯ জুলাই উত্তরায় ৫ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। সেখানে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। ওই সড়কের পাশেই একটি ভবনের চারতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা আক্তার সুলতানা। বারান্দায় শুকানো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগে তার। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ২০ জুলাই নাইমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

এফএইচ/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।