১৬ মামলার এজাহার
যাত্রাবাড়ীতে অধিকাংশই গুলিতে নিহত, ২ পুলিশসহ ৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯-২১ জুলাই সবচেয়ে উত্তপ্ত ছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা। দিন-রাত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসব সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বাকি ২৯ জন কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন।
এসব সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া ১৬টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়। মামলার এজাহার অনুযায়ী, যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ মামলা করেছে ১৪টি। আসামিরা অজ্ঞাতপরিচয়। আর দুই পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের পরিবার বাদী হয়ে আলাদা দুটি মামলা করেছে। দুই মামলার একটিতে ১৭ জন অপরটিতে ১৬ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এজাহারনামীয় সব আসামি বিএনপির নেতাকর্মী।
পুলিশের প্রতিটি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় দুষ্কৃতকারী/সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা ১৬ মামলার এজাহার গ্রহণ করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএ) আদালত। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ১৬ মামলার মধ্যে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা, দনিয়া ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এরফান ওরফে রোকন, ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য মো. আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, মো. সৌরভ মিয়া, মো. তারেক হোসেন ও ঢাকা কলেজের এইচএসসির (বিজ্ঞান বিভাগ) একজন ছাত্র সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গত ২৭ জুলাই তাদের সাতদিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া বাকি ১৫ মামলায় এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি।
মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে গুলিতে নিহত হন বাদশা
গোলাপবাগ মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাদশা নিহতের ঘটনায় ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান। মামলার আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০০/৬০০০ জনকে। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, দুষ্কৃতকারীরা যাত্রাবাড়ী থানাধীন গোলাপবাগ পুলিশ বক্স, পুলিশ কোয়ার্টার, হানিফ ফ্লাইওভার, মানিকনগর বিশ্বরোড মহাসড়কগামী রাস্তার দুই পাশে পার্কিং করা বিভিন্ন পরিবহনের একাধিক বাস/ট্রাকসহ অন্য গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এতে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন গোলাপবাগ মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে পাকা রাস্তার ওপর কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে জাফর হাওলাদার বাদশা (৪২) নামে একজন নিহত হন।
রায়েরবাগ ফুটওভারব্রিজের পাশে গুলিতে নিহত হন জাকির
রায়েরবাগ ফুটওভারব্রিজের পাশে পাকা রাস্তার ওপর সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে জাকির নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থাানার উপ-পরিদর্শক (উপ-পরিদর্শক (এসআই)) আব্দুল কাদের খান জুয়েল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ২০/৩০ হাজার জনকে।
মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ ফুটওভারব্রিজের পাশে পাকা রাস্তার ওপর কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে জাকির হোসেন (২৯) গুরুতর জখম হন। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ২৫ জুলাই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুতুবখালী পকেট গেটের সামনে গুলিতে নিহত হন চারজন
কুতুবখালী পকেট গেটের সামনে মেহেদীসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (উপ-পরিদর্শক (এসআই)) মোস্তাকিম পাটোয়ারী বাদী গত ২৭ জুলাই একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ২০/৩০ হাজার জনকে। গত ১৯ জুলাই রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পকেট গেটের সামনে গুলিতে মেহেদী (২০), নাঈম হাওলাদার (২০), অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ (২৫), অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ (৩৫) গুরুতর জখম হন। পরবর্তীসময়ে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
- আরও পড়ুন
- সংঘাতের চিহ্ন বুকে শান্ত যাত্রাবাড়ী
- কোটা আন্দোলনে নিহত বেশি যাত্রাবাড়ীতে, ১৩ জনের বয়স ১০-১৮
আদর্শ স্কুল গলির সামনে গুলিতে নিহত হন ইমরাত
যাত্রাবাড়ীর আদর্শ স্কুল গলির সামনে গুলিতে ইমরাত নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (উপ-পরিদর্শক (এসআই)) নওশের আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ১০/১৫ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন আদর্শ স্কুল গলির সামনে গুলিতে ইমরাত (২১) গুরুতর জখম হন। ১৮ জুলাই বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শনির আখড়া ব্রিজের ঢালে জিহাদ ও ইব্রাহীম নিহত
শনির আখড়া ব্রিজের ঢালে জিহাদ ও ইব্রাহীম নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (উপ-পরিদর্শক (এসআই)) মোহাম্মদ রাহাত হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ২০/২৫ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়া ব্রিজের পশ্চিম ঢালে গুলিবর্ষণে জিহাদ হোসেন (২২) ও ইব্রাহীম (১৩) নিহত হন।
কাজলা ফুটওভারব্রিজের পাশে নিহত ৪
কাজলা ফুটওভারব্রিজের পাশে আরিফসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফেরদৌস রনি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ১৯/২০ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই যাত্রবাড়ী থানার কাজলা ফুটওভার ব্রিজের পাশে গুলিতে আরিফ (১৮), রবিউল ইসলাম (২৭), অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ (২২) ও অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ (৩০) নিহত হন।
গুলিতে নিহত রুহান
দনিয়া কলেজের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রুহান (২০) নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ১৮/২০ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই দুপুর ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়া কলেজের সামনে গুলিবর্ষণে রুহান (২০) গুরুতর জখম হন। হাসপাতালে নিলে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
- আরও পড়ুন
- ‘দুষ্কৃতকারীর গুলিতে’ পড়ার টেবিলেই লুটিয়ে পড়ে ছোট্ট সামির
- মেট্রোরেল-ডিএনসিসির অফিসে হামলা বিএনপি-জামায়াতের, ক্ষতি ৩৫০ কোটি
- দেওয়াল টপকে প্রবেশ, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে ক্ষতি ৫০০ কোটি
গোপীবাগে নিহত হন সোহাগ
গোপীবাগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সোহাগ (২৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভংকর চন্দ্র দাস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৫/৬ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার গোপীবাগ রেলগেট এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবর্ষণে সোহাগ (২৫) গুরুতর জখম হয়ে মারা যান।
শনির আখড়া ব্রিজের ঢালে নিহত চার
শনির আখড়া ব্রিজের ঢালে চারজন নিহতের ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি অজ্ঞাতপরিচয় ১৯/২০ হাজার জন। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ফুটওভারব্রিজের ঢালে এলোপাতাড়ি গুলিতে আরিফ (৩৫), হাবিব (৪৫), ইউসুফ মিয়া সানোয়ার (৩৫) ও ১৬ বছরের এক কিশোর মারা যান।
গুলিতে নিহত জিসান ও নাসির
জিসান (২০) ও নাসির (৩৯) নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহআলম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ১৯/২০ হাজার জনকে। অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যে কোনো সময় যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের পাশে গুলিতে জিসান ও নাসির নিহত হন।
সন্ত্রাসীদের গুলিতে সাজিদুর নিহত
সাজিদুর রহমান (২০) নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইয়ুব বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৫/৭ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের নিচে আন্দোলনের সময় গুলিতে সাজিদুর রহমান (২০) গুরুতর আহত হন। ২৪ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রায়েরবাগ ব্রিজের নিহত হন এক কিশোর
১৭ বছরের এক কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভবতোষ শীল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৫/৭ হাজার জনকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ ব্রিজের নিচে গুলিতে গুরুতর জখম হন ওই কিশোর। ২৫ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ফুটওভারব্রিজের নিচে নিহত হন মাইন উদ্দিন
মাইন উদ্দিন (২৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থাানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিউজ্জামান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৪/৫ হাজার জনকে। এহজারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ ফুটওভারব্রিজের নিচে গুলিকে মাইন উদ্দিন গুরুতর জখম হন। ২৬ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এসআই মুক্তাদির নিহত হওয়ার ঘটনায় স্ত্রীর হত্যা মামলা
উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মুক্তাদির (৫০) নিহত হওয়ার ঘটনায় তার স্ত্রী মনিরা আক্তার বাদী হয়ে গত ২৪ জুলাই বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও অনেককে।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আমার স্বামী ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স তোপখানা রোডে ডিউটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের সামনে আসা মাত্রই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০ টার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবীসহ ১৭ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের প্ররোচনায় আমার স্বামীর পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করে। আমার স্বামী রাস্তায় পড়ে গেলে আসামিরা লোহার রড, লাঠি দিয়ে তার দুই হাত, বুক, পেট, পিঠ, দুই পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ঘটনাস্থালে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে রশি দিয়ে ফুটওভারব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
পুলিশ সদস্য গিয়াস হত্যা: বিএনপির নয়নসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা ঘটনায় গত ২৪ জুলাই তার ভগ্নিপতি ফজল প্রধান বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম নয়নসহ ১৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও অনেককে আসামি করা হয়।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) পরিবারসহ মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের বিপরীত পাশে থাকতেন। গত ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টায় গণভবনে সরকারি ডিউটি পালনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে বের হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ফুটওভারব্রিজের উত্তর পাশে আসা মাত্রই আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও অনেকে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গিয়াস উদ্দিনকে আটক করে।
এরপর তাকে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যার উদ্দেশ্যে জখম করে। পরে রাস্তায় পড়ে গেলে আসামিরা লোহার রড, লাঠি দিয়ে গিয়াস উদ্দিনের নাক, কান, মুখমণ্ডল, গলা, হাত, বুক, পেট, ডান পায়ের হাঁটুর নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর তাকে রশি দিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
গুলিতে সাংবাদিক মেহেদীসহ ৭ জনের মৃত্যু
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গুলিতে সাংবাদিক মেহেদী হাসানসহ সাতজনের মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ৩০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। শনিবার (২৭ জুলাই) যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. হোসেন জায়েদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। নিহত হওয়া অন্যরা হলেন- ওয়াসিম শেখ (৩৮), অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ (২৮), মো. শাকিল (২০), নাজমুল কাজী (৩৪), আব্দুল্লাহ (২০) ও অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষ (৩০)।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ২০/৩০ হাজার জন বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী এবং অন্য দুষ্কৃতকারীরা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের আড়ালে সমাবেত হয়ে সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে। এসময় তারা ফুটওভারব্রিজ এবং ট্রাফিক পুলিশ অফিস বক্স, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, হানিফ ফ্লাইভারের টোলপ্লাজা, মহাসড়কের ডিভাইডার, বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করাসহ থানা ভবন দখল ও থানার অস্ত্র, গুলি নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছিল।
এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে কাজলা এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীরা ওয়াসিম শেখ (৩৮) ও নাজমুল কাজীকে (৩৪) পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন স্বজনরা
নিহত এএসআই মোহাম্মদ মোক্তাদিরের ছেলে মাহফুজ রহমান (১৯) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার কোনো দোষ ছিল না। আমি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই।’
হত্যার বিচার চেয়েছেন নিহত নায়েক গিয়াসের ভগ্নিপতি ফজল প্রধানও। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গিয়াস তার দায়িত্ব পালনের জন্য রায়েরবাগ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। সেখানে ডিউটিও ছিল না তার। তার মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা ও রেশন কার্ড দেখে তাকে পুলিশ হিসেবে শনাক্ত করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা এখন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। তাকে নৃশংসভাবে যারা রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, এটাই আমাদের চাওয়া।’
তদন্ত অব্যাহত আছে
ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের উপকমিশনার শাহেদ আল মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্য গিয়াস হত্যা মামলায় কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাসুদ রানা নামের এক আসামি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’
জেএ/এএসএ/জিকেএস