হাইকোর্টে ব্যারিস্টার অনীক

যে প্রাণগুলো গিয়েছে তারা কি আমাদের সম্পদ নয়?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, ৩০ জুলাই ২০২৪
ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেছেন, মেট্রোরেল-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা বলি, এগুলো আমাদের সম্পদ। কিন্তু যে প্রাণগুলো গিয়েছে তারা কি আমাদের সম্পদ নয়? তারা চলে যাওয়ায় সম্পদ তো আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। মৃত্যু বন্ধ করুন।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এসব কথা বলেন তিনি।

সোমবার (২৯ জুলাই) হাইকার্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ রিটের শুনানি হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজাহার উল্লাহ ভুঁইয়া শুনানিতে অংশ নেন। এরপর আদালত শুনানির জন্য মঙ্গলবার পরবর্তী দিন রেখেছেন।

আরও পড়ুন
দুঃসময় পার করছে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষকরা স্বার্থের ‘দেনদরবারে’ 
শিশু ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ভুল হয়েছে: হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ 
শিক্ষক-আইনজীবী-সংস্কৃতিকর্মী ও অভিভাবকদের গণতদন্ত কমিশন 

শুনানিতে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, কাউকে নিরাপত্তার স্বার্থে তুলে নেওয়া যায় না। গ্রেফতার করলে বলতে হবে কোথায় নিচ্ছে, কেন নিচ্ছে, কে নিচ্ছে। এখানে যারা নিয়েছে (ডিবি) তারাই বলছে তাদের কাছে রাখা হয়েছে। কোনো আইনে নেই এভাবে কাউকে তুলে নেওয়া যায়। আপনাদের সামনে যাতে তাদের হাজির করা হয় অথবা মুক্ত করে দেওয়া হয়। তারা (ডিবি) বলছে নিরাপত্তার স্বার্থে রাখছি। এই ক্ষমতা তাদের কোথায় দেওয়া আছে? একজনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে অন্য কারও কাছে রাখা যাবে কোথায় আছে? কোথাও লেখা নেই এভাবে কাউকে তুলে নেওয়া যায়।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম দিয়ে যে কার্যকলাপ হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। কোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি বুকে হাত দিয়ে...। এসময় হাইকোর্ট বলেন, এই বিষয়টি আপিল বিভাগ নিষ্পত্তি করেছে। জেড আই খান বলেন, আমি যদি দেখতাম ছাত্ররা নিরাপদে ঘুরতে পারছে, স্কুল-কলেজে যেতে পারছে, তাহলে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। আপত্তি হলো রাতে যখন ব্লক রেইড দেয়, একেকটা এলাকায়, ৭১ সালে যেমন হয়েছিল।

জেড আই খান পান্না বলেন, ৭১ সালে দেখেছি পাকহানাদাররা রাতের বেলা ব্লক রেইড দিয়ে খুঁজতো মুক্তিবাহিনী আছে কি না। আজ ২০২৪ সালে আমরা দেখলাম দরজায় দরজায় নক করে খোঁজ করছে ছাত্র আছে কি না? যদি ছাত্র থাকে তাহলে তাদের মোবাইল ফোন চেক করে। এটা কোন আইন আছে? তারা সীমা অতিক্রম করছে। বিজিবি সীমান্তে...।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির পান্নার উদ্দেশ্যে বলেন, এই বক্তব্য পল্টন ময়দানে দেন। জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, আমি পল্টন ময়দানে বক্তব্য দিয়ে এসেছি, রাজাকারগিরি করিনি।

এসময় তিনি আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই তো সরকারের অবস্থা। বাইরে কী হবে? কোর্টের ভেতরে সরকারের অবস্থা এই। বাইরে কী করে এরা সেটা আমি বলতে চাই না। ব্লক রেইড দিয়ে যা করে রাতের বেলা এটা কি আইনসঙ্গত? মোটেই না।

ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ হলে পিআরবি অনুযায়ী আত্মরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। আমরা বলছি ছাত্রদের ওপর লাইভ গুলি না করতে। যেটাতে মানুষ মারা যেতে পারে। আমরা চাই না দেশের সম্পদ নষ্ট হোক। এই ছাত্র-ছাত্রীরা কি দেশের সম্পদ নয়? তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সর্বনিম্ন যেটুকু করা প্রয়োজন সেটা করা যেতে পারে। আজ যদি আমরা মেট্রোরেল-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা বলি, এগুলো আমাদের সম্পদ। কিন্তু যে প্রাণগুলো গিয়েছে তারা কি আমাদের সম্পদ নয়? তারা চলে যাওয়ায় সম্পদ তো আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। মৃত্যু বন্ধ করুন। এরা আমাদের ছেলে।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, উনারা কি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন বিটিভি-মেট্রোরেলে আর হামলা হবে না? নরসিংদী কারাগারে হামলা করে আসামিদের ছাড়িয়ে নেওয়া হলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন কী করবে? এসময় আদালত বলেন, নরসিংদীর যে বিষয়টি বলেছেন, সেখানে মিছিলের সময় একটি ছেলে মারা গেছে। মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, যতটুকু বেআইনি হয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সবগুলো তদন্ত করা হবে, হচ্ছে।

মেহেদী হাসান চৌধুরী আরও বলেন, তারা যে ছয়জনের কথা বললেন, আমরা টিভিতে দেখেছি এই ছয়জন ডিবিতে বসে কাটা চামচ দিয়ে খাচ্ছে। এসময় উপস্থিত আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে নানান কথা বলতে থাকেন।

আদালত বলেন, এগুলো করতে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? আপনারা জাতিরে লইয়া মশকরা কইরেন না। যাকে ধরে নেন, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন। মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, ছয়জনের স্বজনরা কেউ কোর্টে আসেননি। এই আবেদনে রুল ইস্যু করা যায় না।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ বলেন, আমরা সময় চাই, অ্যাটর্নি জেনারেল আসুক। আদালত বলেন, আগামীকাল হবে। তখন ব্যারিস্টার অনীক আর হক মৌখিক আদেশ চান। এসময় শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, দেখতে হবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আইনগত এখতিয়ার প্রয়োগে বাধা হচ্ছে কি না। দুদিক থেকেই ইনজুর হচ্ছে। আর ৬ জনকে (সমন্বয়ক) আটক করা হয়েছে কে বলেছে, কোথায় বলেছে?

আদালত বলেন, যদি আটক না করে, দিনের পর দিন রাখেন কীভাবে? শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ বলেছে তাদেরকে আটক করা হয়েছে? যদি গ্রেফতার করা হতো তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেওয়া হতো। পরে এ বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা রিটটি করেন।

এফএইচ/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।