শিশু ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ভুল হয়েছে: হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেফতার ১৭ বছরের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ভুল হয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করায় শিশু আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। এ ধরনের ভুল যেন না হয় সে বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি শিশু ফাইয়াজের রিমান্ড বাতিল করা হয়েছে এবং তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ ভুল স্বীকার করায় আদালত এ বিষয়ে দায়ের করা রিট আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে আদেশ দেন। সোমবার (২৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকার ও বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আইন লঙ্ঘন করে ফাইয়াজকে দড়ি বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তোলা এবং রিমান্ডে নেওয়ার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর ও শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ।
শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর আদালতে বলেন, ‘শিশু ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ও কোমরে দড়ি পরানোর বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে, যাতে এ ধরনের ভুল না হয়। রিমান্ড বাতিল করা হয়েছে। তার রিমান্ড বাতিল করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’
এরপর আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আপনার আবেদনের ওপর একটি পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন। পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, রুল দিলে এটা আরও সমস্যা হতে পারে। এরপর আদালত আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল রোববার আদালত শুনানিতে বলেন, অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, কিন্তু এমন ২/১ ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এসব কারণে বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলেও মনে করেন আদালত।
আরও পড়ুন
- হাইকোর্টের উষ্মা, বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ
- ১৭ বছরের ফাইয়াজের রিমান্ড বাতিল, উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠালেন আদালত
একপর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, বাচ্চাটা আপনার হলে কী করতেন? তাই এ বিষয়ে আজই পদক্ষেপ নিন। আমরা আজ কোনো আদেশ দিচ্ছি না। আগামীকাল বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।
এ বিষয়ে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দেখি যে একজন শিশুকে এভাবে দড়ি বেঁধে পুলিশ ভ্যানে তুলছে। এটি দেখে সকালেই আমরা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন, পিটিশন আকারে নিয়ে যেতে। পিটিশন নিয়ে গেলাম। শিশু আইন ২০১৩ যেটি আছে, এ আইনের কতগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। কাউকে যদি গ্রেফতার করতে হয় তাহলে পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি কি না।’
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আটক ব্যক্তি মাইনর (শিশু), তাকে রিমান্ডে নিতে পারে না। হাইকোর্ট বলেছেন তার রিমান্ড বাতিল করে বাবা-মায়ের হেফাজতে দিতে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
গত শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফাইয়াজের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। বর্তমানে ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের এ শিক্ষার্থীকে শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়। মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর। গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায় বলে জানায় তার পরিবার।
রিমান্ডের আদেশের বিষয়ে ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং মামলাটি শিশু আদালতে পাঠানোর আবেদন করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করে শিশুটিকে ৭ দিনের রিমান্ড দেন।
এফএইচ/কেএসআর/এমএস