মৃত্যু-নির্যাতন
শিক্ষক-আইনজীবী-সংস্কৃতিকর্মী ও অভিভাবকদের গণতদন্ত কমিশন
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেফতারের ঘটনায় শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টে গণহত্যার বিচার ও গায়েবি মামলায়-গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এক আইনজীবী সমাবেশে এজাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কমিশনের সদস্যরা হলেন- আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, সিনিয়র আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক, অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা।
বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন ও সুলতানা কামাল এ কমিশনের যুগ্ম-সভাপতি। কমিশনের সদস্যসচিব হিসেবে যুগ্মভাবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান ও মাহা মির্জা।
আরও পড়ুন:
- ধরে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না
- চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছত্রভঙ্গ করলো পুলিশ
এছাড়া এই গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন- সিনিয়র আইনজীবী তোবারক হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ্ খান, শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, আইনজীবী রাশনা ইমাম, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার।
এদিন আইনজীবী সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, মোবারক হোসেন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনীক আর হক, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদ মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।
আইনজীবী সমাবেশে জেড আই খান পান্না বলেন, ছাত্রদের ৮ দফা দাবি খুবই যৌক্তিক ছিল। এই ছাত্ররাই কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুরু করে ছিল বটতলা থেকে। পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত দেখিনি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি দাবি নিয়ে এতগুলো ছাত্রকে হত্যা করা হয়। রাতের অন্ধকারে কেন ব্লক রেইড দিয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হবে, কোন অধিকারে। কোন আইন এই অধিকার দিয়েছে। আমরা ধিক্কার জানাই। যে রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। পদে পদে সরকার তা বরখেলাপ করছে।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের প্রতি আবেদন তারা যেন আপিল বিভাগের নির্দেশনা মান্য করে। যাচাই-বাছাই না করে রিমান্ডে পর্যন্ত দিচ্ছে। আপনারা কী বিচারক, না কসাই। আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। এটা জাতির জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে। এই বিচারের ভার জনগণের ওপর দিলাম। আমরা আইনজীবী হিসেবে একটা গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছি। যেটা তদন্ত করে দেখবে। আমরা ছাড়বো না।
আরও পড়ুন
- কোটা আন্দোলনে আহত-নিহতের সংখ্যা সরকারিভাবে প্রকাশের দাবি
- কোটা আন্দোলনকে আমলে নিয়ে নিরাপত্তা কমিটি করলো ইসি
এরপর গণমাধ্যমে পাঠানো গণতদন্ত কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত। বিশেষ করে এই সহিংসতার প্রতিবাদে বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে আবু সাঈদকে সরাসরি বুকে গুলি করা হয়। কিন্তু পুলিশ যখন মামলা করে তখন সাধারণ ছাত্র এবং জনগণকে দায়ী করা হয়। এতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে। এসব ঘটনায় সত্য উদঘাটনের দাবি উঠেছে। এ ঘটনায় পত্রিকার হিসাবে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হলেও, সরকারি হিসাবে তা ১৪৭ জন।
আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেফতারসহ নানান সহিংস উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং তাতে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযেগ উঠেছে।
এসব ঘটনার কারণ উদঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সব সচেতন ব্যক্তিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১ জুলাই থেকে সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে পাঠানোর জন্য শিগগির আহ্বান জানানো হবে।
এফএইচ/এসএইচএস/এমএস