মামলায় অভিযোগ
তিতুমীর কলেজে তাণ্ডব চালিয়ে ৯০ লাখ টাকার মালামাল চুরি
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সরকারি তিতুমীর কলেজে হামলা চালায় বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও তার অঙ্গ সংগঠনের দুষ্কৃতকারীরা। এসময় দুষ্কৃতকারীরা অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের গেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে ৪০টি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৫০টি টেবিল ফ্যান, ৪৬টি সিলিং ফ্যান, ২টি টেলিভিশন, ২০টি দেওয়াল ঘড়ি, ৭ শিক্ষার্থীর তালাবদ্ধ করা টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকাসহ আনুমানিক চল্লিশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।’
এ সংক্রান্ত মামলার এজাহারে বাদী এসব কথা উল্লেখ করেছেন। ২৫ জুলাই সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু (৫৮) বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা ৫০০-৭০০ জনকে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি ভাঙচুর
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই সরকারি ছুটি থাকায় ক্লাস ও ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৫০০-৭০০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও তার অঙ্গ সংগঠনের দুষ্কৃতকারী আসামিরা আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের মেইনগেট বন্ধ থাকায় আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের গেট লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। যা একপর্যায়ে আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের মেইনগেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে ভীতি সৃষ্টি করে কলেজের মূল ফটক ভেঙে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি, কলেজ ক্যাম্পাসের ৪০টি সিসি ক্যামেরা, অধ্যক্ষের অফিস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, জানালা, সোফাসেট, আলমারি, জানালার কাচ, সিসিটিভি মনিটর, আইপিএস, ল্যাপটপ, টেলিফোন সেট, এসি এবং সব সরকারি নথিপত্রসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র এবং উপাধ্যক্ষের অফিসের ১টি প্রিন্টার ও ১টি ডেক্সটপ ভাঙচুর ও বিনষ্ট করে।
দুর্লভ প্রায় ৫০০টি ছবি ভাঙচুর
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, কলেজের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ছাত্র সংসদের ৩টি কক্ষের দরজা, জানালা, চেয়ার, টেবিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি ভাঙচুর করে। ‘হৃদয়ে মুজিব’ নামক বঙ্গবন্ধু কর্নারে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু পরিবার, জাতীয় চার নেতাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আনুমানিক ১৫০টি ছবি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ প্রায় ৫০০টি ছবি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৫০০টির অধিক বইসহ, টেবিল, চেয়ার, লাইট, সিসি ক্যামেরা, আইপিএস, সরকারি তিতুমীর কলেজের সেন্ট্রাল ইন্টারনেট সার্ভার, শেখ রাসেল পুষ্প কানন, জয় বাংলা মুক্ত মঞ্চ, কলেজের ছাত্র পরিবহনের ১টি বাসের সব গ্লাস এবং পুরাতন বিজ্ঞান ভবনের নিচতলার চারদিকে কাচের গ্লাস পরিবেষ্টিত সবগুলো জানালা ভাঙচুর করে। ভাঙচুর করে আনুমানিক এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। এছাড়া অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ হতে ৩টি মনিটর, ৪টি হার্ডডিস্ক, ছাত্র সংসদের কক্ষ থেকে ১টি ডেস্কটপ, ২টি ল্যাপটপ, ১টি টেলিভিশন, ৪টি সিলিং ফ্যান, ৬টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৪টি টেবিল ফ্যান, ২টি আলমারি, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সরঞ্জাম, পানির ফিল্টার, তৈজসপত্রসহ অনুমান পঞ্চাশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
- আরও পড়ুন
- ৭১ এর বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ ফের দেখেছে
- বিটিভি-মেট্রোরেলে নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করুন
পরবর্তী সময়ে একই তারিখে সময় অনুমানিক রাত ১০টা নাগাদ আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের গেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে তিনতলা বিল্ডিংয়ের ৪৬টি কক্ষের দরজা, জানালা, শিক্ষার্থীদের চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি, বুক সেলফ, ছাত্রাবাসের ভেতরে পার্কিংয়ে থাকা ১২টি মোটরসাইকেল, ১০টি বাইসাইকেলসহ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আনুমানিক পঞ্চাশ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়।
শিক্ষার্থীদের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকা লুট
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৪০টি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৫০টি টেবিল ফ্যান, ৪৬টি সিলিং ফ্যান, ২টি টেলিভিশন, ২০টি দেওয়াল ঘড়ি, ৭ শিক্ষার্থীর তালাবদ্ধ করা টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকাসহ আনুমানিক চল্লিশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
- আরও পড়ুন
- কোটা আন্দোলন ঘিরে মামলা-গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
- গ্রেফতারের ভয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা
এজাহারে আরও বলা হয়, চুরি যাওয়া মালামাল ও ক্ষতিসাধনের হিসাব মিলিয়ে অধ্যক্ষ মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই বিএম সাদ্দাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু (৫৮) জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কলেজে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও কলেজের মালামাল চুরির ঘটনায় একটি মামলা করেছি। আমি অধ্যক্ষের নির্দেশে এ মামলা করি। আমি ন্যায়বিচার চাই।
জেএ/এমএইচআর/জিকেএস