বিচারকদের জবাবদিহিতার জন্যই বিচারপতি অপসারণ আইন
বিচারকদের জবাবদিহিতার জন্যই বিচারপতিদের অপসারণ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় আইন কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়ে আইনের খসরা তৈরি করে জাতীয় সংসদ ও বিচার বিভাগকে মুখোমুখি করার কোনো কারণ নেই। বরং বিচারকদের জবাবদিহিতার জন্যই এই আইন তৈরি করা হয়েছে।
বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, সংসদ সদস্যদের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে বিচারকদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না।
তিনি সংসদ সদস্যের প্রতি আস্থাশীল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই আস্থা রাখি।
তিনি বলেন, যদি কেউ বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাহলে প্রথমে তা লিখিতভাবে স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে। স্পিকার ১০ তার জন সংসদ সদস্যকে ঠিক করে দেবেন তারা প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করবেন বিষয়টি তদন্ত করার উপযুক্ত কিনা।
তিনি আরো বলেন, এই আইনের মাধ্যমে বিচারকদের বিব্রত করা আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না। জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। কেননা একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর সংসদ সদস্যরা প্রথমে শুধুমাত্র অভিযোগের বিষয়ে মতামত দেবেন।
মতামত দেয়ার আগে প্রথমে থাকবেন ১০ জন সংসদ সদস্য। তারা প্রাথমিকভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে একশত ৫১ জন সংসদ সদস্যের সঙ্গে রুদ্ধধার বৈঠক করে (ক্যামরা ট্রায়েলের মাধ্যমে) মতামত নেয়ার জন্য পাঠাবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বিষয়টি তদন্ত করা হবে কিনা। এবং এই বিষয়টি কোনোভাবেই প্রকাশ করা হবে না।
খায়রুল হক বলেন, এক্ষেত্রে অধিকাংশের মতামত লাগবে। আর তদন্ত করবে সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তিনজন। যার একজন হবেন অ্যাটর্নি জেনারেল অপরজন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক।
সংসদ সদস্যরা বিচারকদের ওপর ক্ষুব্ধ থাকলে বিচারকদের বিরুদ্ধে সংসদে তুলোধুনা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকল সংসদ সদস্যতো পাগল না। সবাই যদি পাগল হয়ে সিদ্বান্ত নেয়। তাহলে আমরা ও পাগল হয়ে যাবো। সংসদ সদস্যদের প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে হবে। এছাড়া বিকল্প কি করার আছে? আমরা কি বিদেশ থেকে সংসদ সদস্য ভাড়া করে নিয়ে আসবো?
তিনি বলেন, একমাত্র রাষ্ট্রপতি ব্যতীত কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। সবারই জবাবদিহিতা থাকা উচিৎ। বিচারকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে এবং সম্মানহানি যেন না হয় সেজন্য তদন্ত করার জন্য সাবেক একজন প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে রাজনৈতিক চিন্তার বাইরের লোক দিয়ে তদন্ত করা হবে। পাকিস্তানই একমাত্র দেশ যা ছাড়া পৃথিবীর সকল দেশে বিচারকদের জবাবদিহিতার বিষয়টি সংসদের হাতে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের বিচারকরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের বিচারকদের দুদকে যেতে হয়নি। এটা আমাদের বিশাল অর্জন। আমি আশাকরি ভবিষতেও যেতে হবে না। একটা আইন থাকা দরকার, তাই আইন করা।
তিনি আরো বলেন, জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট, সংবিধান, এ আইন জনস্বার্থে তৈরি করা হয়েছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান বিচারপতি বলতে পারে না রায় এভাবে দাও। কেননা সকল বিচারকরা স্বাধীন। আমাদেরও একটা দ্বায়বদ্ধতা আছে জনগণের কাছে এবং সংবিধানের কাছে। আর আমরা করছি তার সবই সংবিধান এবং জনগণের জন্য।
বিচারকদের অপসারণে আইন তৈরি করা হলো। কিন্তু বিচারকদের নিয়োগের বিষয়ে কোনো আইন করবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটিও হওয়া উচিৎ। তবে সরকার আমার কাছে না চাইলে আমরা পরামর্শ দিতে পারি না। স্ব-প্রণোদিত হয়ে দিতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমিওতো পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে নই। সরকার না চাইলে আমাদের কি করার আছে।
অনেক জাতীয় সংসদ সদস্য আইন বোঝে না এমনকি শিক্ষাগত অযোগ্য রয়েছে তারা বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যাগনাকাটা চুক্তিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা পড়ালেখা জানতো না। এমনকি সাক্ষর দিতে না পারায় টিক চিহ্নকে সাক্ষর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাই আমাদের সংসদ সদস্যরা এ পর্যায়ে নেই। আমাদের দেশেতো ’রেডিমেড’ গণতন্ত্র নেই। আস্তে আস্তে গণতন্ত্র তৈরি হবে।
২৫ এপ্রিল সোমবার মন্ত্রিপরিষদে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ খসড়া আইন পাস করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের নিজের প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় আইন কমিশনের সদস্য প্রফেসর শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি