আ’লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: ৭৫ পাউন্ডের কেক কাটল সুপ্রিম কোর্ট বার
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করলো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন)।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ৭৫ পাউন্ডের কেক কেটে ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বর্তমানে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এগুলো মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অগ্রগতিতে বহুবিধ উন্নয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। এটি এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি-সম্পাদক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ, মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু, আজাহার উল্লাহ ভুইয়া, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারাসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল ২৩ জুন। বাঙালির অধিকার ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে দলটির নাম।
বাংলার এ ভূখণ্ডের ক্রান্তিকালে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম নিয়ে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তখন মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন এ দল গঠন করেন।
সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ পূর্ব পাকিস্তানে (পূর্ব বাংলা) শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার প্রসার ঘটতে থাকে। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা এ আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে দলটি আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামের ব্রত নিয়ে আওয়ামী লীগ নামের এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে এ দল।
প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পান এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি জাতি এ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বের এ শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন, গ্রুপিং ও বহু ধারায় বিভক্তি দেখা দেয়। দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
শেখ হাসিনা ওই বছর ১৭ মে দেশে ফিরে আসার পর তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে।
এফএইচ/এমকেআর/এএসএম