এমপি আনারকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নিয়ে যান তানভীর
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেফতার ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দির আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীর ও অন্য আসামিরা আনোয়ারুল আজীম আনারকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নিয়ে যান।
মঙ্গলবার (৪ জুন) রিমান্ড চলাকালীন তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তা রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২৩ মে সাভার থানাধীন লুটেরচর এলাকা থেকে তানভীরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তিনি ঘটনার মূল আসামি শাহীনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা। ফলে তানভীর তার চাচা শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনায় ৬ মে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান এবং সেখানে সল্টলেক আর নিউটাউনের মাঝামাঝি ত্রিশিব নামক হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে বিভিন্ন সময়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ারুল আজীমকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নিয়ে যান বলে স্বীকার করেন তানভীর।
আরও পড়ন:
- এমপি আনারের ‘হত্যা’ প্রমাণ না হলে মামলার ভবিষ্যৎ কী?
- এবার নৌ ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর অভিযানেও মিললো না দেহাংশ
- যুক্তরাষ্ট্র থেকে শাহীনকেও ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো
এর আগে সোমবার (৩ জুন) রিমান্ড চলাকালীন সিলিস্তি রহমানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তা রেকর্ডের আবেদন করেন ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এ মামলায় ৩১ মে কয়েকজন আসামির প্রথম দফা রিমান্ড শেষ হয়। তারা হলেন- সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। তাদের আদালতে হাজির করে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আরও আটদিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ২৪ মে দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিন আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি প্রত্যেকের আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগের দিন ২৩ মে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমানকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজীম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
এ ঘটনায় ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই। ১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো’।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।
‘এছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে’- এজাহারে উল্লেখ করেন ডরিন।
জেএ/জেডএইচ/জেআইএম