এবার বেনজীরের কোম্পানি-ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২৬ মে ২০২৪
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২৬ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পত্তির দলিল ১১৫, ঢাকায় ফ্ল্যাট চারটি, বেনজীরের চারটি শতভাগ মালিকানা কোম্পানি, ১৫টি আংশিক মালিকানা কোম্পানি ও চারটি বিও অ্যাকাউন্ট দুদকের পক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ক্রোকের আবেদন করেন। আদালত তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ৮৩ দলিলের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির ৮৩টি দলিলে থাকা ১০৯ একর ৬২ দশমিক ৪৬ শতাংশ জমি অবৈধভাবে অর্জন করেন। যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন:
বেনজীর ও তার পরিবারের ১০৯ একর জমি অবৈধ 
আরও কিছুদিন সময় পেলে বেনজীর গোপালগঞ্জ কিনে ফেলতেন 

এছাড়া, অভিযুক্তরা বাংলাদেশে তাদের নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রি/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করেছেন। অনুসন্ধান/মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে বলে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেনের আদালতে এ নিবেদন করেন।

আদালত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুয়ায়ী নিম্নবর্ণিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন।

বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ১৮ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারার বিধান মোতাবেক অভিযোগ সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।

দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর নিবেদন করেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী জিশান মির্জা ও মেয়েদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।

পিপি আরও উল্লেখ করেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিম্ন তফসিলে বর্ণিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পদসমূহ অবৈধভাবে অর্জন করেন। এছাড়া অভিযুক্তরা বাংলাদেশে তাদের নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রয়/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন অনুসন্ধান/মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে।

পিপি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধিত-২০১৯) এর বিধি ১৮ এর বিধান মতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামীয় অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোককরণ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণের আবেদন করেন।

তফসিলে বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোককরণ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিল করা দরখাস্ত ও সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পর্যালোচনা করা হলো। বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। পিপির বক্তব্য, দরখাস্তে বর্ণিত আবেদন ও অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় দরখাস্তটি মঞ্জুরযোগ্য মর্মে প্রতীয়মান হয়।

বেনজীরের নামে সম্পত্তি রয়েছে গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজার এলাকায়। তার নামে মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮ একর ১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

স্ত্রী জিশান

বেনজিরের স্ত্রী জিশান মির্জার নিজস্ব নামে সম্পত্তি রয়েছে ৭ একর ১৬ শতাংশ, যার বাজারমূল্য ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

বড় মেয়ে ফারহিন

ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের জমির পরিমাণ ১৩ একর ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে সম্পত্তি আছে ৮ একর ২৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। মোট বাজারমূল্য ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সাভানা ফার্ম প্রোডাক্টসের পক্ষে চেয়ারম্যান হিসেবে তার স্ত্রী জিশান মির্জার সম্পত্তি আছে ২৮ একর ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাজারমূল্য ৩ কোটি ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।

সাউদার্ন পার্ক রিসোর্ট অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের পক্ষে চেয়ারম্যান জিশান মির্জা ও স্বামী বেনজীর আহমেদ। সম্পত্তির পরিমাণ ১১ একর ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পত্তি।

সাভানা এগ্রো লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান জিশান মির্জা, স্বামী বেনজীর আহমেদ; জমির পরিমাণ ১৬ একর ৬৫ শতাংশ। মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

সাভানা ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান জিশান মির্জা। স্বামী বেনজীর আহমেদ। জমি ৪ একর ৫ শতাংশ। মূল্য ৩০ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

তিন সন্তান

ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর, জারা জেরিন বিনতে বেনজীরের যৌথ নামে সম্পত্তি রয়েছে ৩৫ শতাংশ। যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

জেএ/জেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।