গুলশানের ফ্ল্যাটে চলতো মাদক কারবার, জানতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
২০১০ সালে থাইল্যান্ড যাওয়ার পর আর দেশে ফেরেননি আজিজ মোহাম্মদ ভাই

রাজধানীর ক্লাবপাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনোগুলোতে অভিযানের পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের দুটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ নবীন মন্ডল ও পারভেজ নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তাদের হেফাজত থেকে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার মদ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় করা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, মদ উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাট দুটির মালিকানা সর্ম্পকে জানার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে সিটি করপোরেশন একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। গ্রেফতার দুই আসামিও জানান, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক কারবারের বিষয়ে অবগত ছিলেন।

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকআজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া মাদক

২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশানের
গুলশান-১ এর রোড-২৮ বাসা নম্বর-৫২, ফ্ল্যাট নম্বর-এ-১ ও গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/বি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

গ্রেফতাররা হলেন- রাজবাড়ী সদরের দুর্গাপুরের মৃত জাবেদ মন্ডলের ছেলে মো. নবীন মন্ডল (৪৮) ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মীর মো. জাহেদুল হকের ছেলে মো. পারভেজ (২৪)। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক এস.এম সামসুল কবীর গুলশান থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

 

বেশিরভাগ সময় ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকত। মাঝে মাঝে বিশেষ করে বিকেলে ও সন্ধ্যার পর কখনো আসামি নবীন মন্ডল আবার কখনো পারভেজ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে আসতেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করতেন

 

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, গুলশানের একটি বাসায় বিপুল পরিমাণ মদ সংরক্ষণ করে একটি চক্র মাদকের রমরমা কারবার করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় দুই আসামি নবীন মন্ডল ও পারভেজকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার মদ।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, ডিএমপি গুলশান থানাধীন তাদের বাসার ঠিকানার অন্য একটি ফ্লাটে বিপুল পরিমাণ মদ ও সিসা মজুত আছে। সেগুলোও তারা দেখাশোনা করেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার দুই আসামিকে সঙ্গে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

মামলাটির তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। চার্জশিটে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ আনা হয়।

পরিবারের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইপরিবারের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মাদক উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাটটি মালিকের অনুপস্থিতিতে আসামি নবীন মন্ডল ও পারভেজ দেখাশোনা করতেন। বেশিরভাগ সময় ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকত। মাঝে মাঝে বিশেষ করে বিকেলে ও সন্ধ্যার পর কখনো আসামি নবীন মন্ডল আবার কখনো পারভেজ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে আসতেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করতেন।

 

মদ উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাট দুটির মালিকানা সর্ম্পকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এক প্রতিবেদনে জানায়, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। গ্রেফতার দুই আসামিও জানান, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক কারবারের বিষয়ে অবগত ছিলেন

 

চার্জশিটে বলা হয়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা মামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। তারা এ-ও জানান যে, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক কারবারের বিষয়ে অবগত আছেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা মদ উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাট দুটির মালিকানা সর্ম্পকে জানার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দেয়। চিঠির জবাবে সিটি করপোরেশন একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। উল্লেখ্য, আজিজ মোহাম্মদ ভাই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত একজন আসামি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় গত বছরের ১২ নভেম্বর আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি। মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাই পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

রহস্যমানব আজিজ মোহাম্মদ ভাইরহস্যমানব আজিজ মোহাম্মদ ভাই

এদিকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সর্বশেষ বিদেশ গমনাগমনের তথ্য পান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তাতে জানা যায়, তিনি ২০১০ সালের ১১ মার্চ থাইল্যান্ড গমন করে আর দেশে ফিরে আসেননি।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেই পরিচিত। একসময় তার বিরুদ্ধে চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠলেও তদন্তে সেটির প্রমাণ মেলেনি। তবে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি।

জেএ/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।