কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের সংখ্যা কত, জানতে চান হাইকোর্ট
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কতজন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে নাগরিকত্ব পেয়ে ভোটার হয়েছেন তার তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, যে সব রোহিঙ্গাদের ভোটার করা হয়েছে তাদের নাম তালিকা থেকে (কর্তন) বাদ দেওয়ার জন্য বলেছেন আদালত। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আগামী ৬ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলেছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া এ রিট দায়ের করেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ স্থানীয় ভোটার মো. হামিদুর রহমানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন এই আইনজীবীই।
তিনি জানান, তদন্তে প্রমাণিত ৩৫ জন রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ জানান, ২০১৬ সাল থেকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কিছু ক্ষমতাধর কথিত জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে অসংখ্য রোহিঙ্গাদের জাল ঠিকানা, ভুয়া পিতামাতা সাজিয়ে ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডিসহ দেশের নাগরিকত্ব দিতে সরাসরি সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ইউনিয়নে অন্তত ৩৭০ জন রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় এক বাসিন্দা ৩৮ জন রোহিঙ্গার নাম উল্লেখ করে বিবাদীদের প্রতি অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর সবশেষ ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে ৩৮ জনের মধ্যে ৩৫ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। এতে ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের জড়িতদের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এসব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দেওয়া সংক্রান্ত কাগজপত্র বাতিল করে তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব রোহিঙ্গাদের ভোটার রেখেই ওই ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হামিদ হাইকোর্টে রিট করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া ওই ভোটারের পক্ষে এ রিট দায়ের করেন।
শুনানি শেষে বিবাদীদের প্রতি ৪ সপ্তাহের রুল জারি করে ভোটার তালিকা থেকে তদন্তে প্রমাণিত রোহিঙ্গাদের নাম বাদ এবং আগামী ৬ জুনের মধ্যে কক্সবাজার জেলায় কতজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়েছে, তা তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
রিটে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিব এবং রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) মোট ১৭ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এফএইচ/জেএইচ/এএসএম