বিচারককে হেয় করে বক্তব্য: খুলনার পিপি পলাশকে হাইকোর্টে তলব
আদালত অবমাননা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হেয় করে ভিডিও প্রকাশ করায় ব্যাখ্যা দিতে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম পলাশকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। ৭ মে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ঘটনায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে বুধবার (৩ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
এর আগে ৩১ মার্চ জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি দেন খুলনা মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক তরিকুল ইসলাম।
চিঠিতে বলা হয়, একটি মামলার শুনানি কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। এ কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি মামলাটি না শুনে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই।
তখন জহিরুল ইসলাম পলাশ বলে ওঠেন, ‘আপনি আমাকে না শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন?’
আমি (বিচারক তরিকুল ইসলাম) বললাম, ‘এটা কোর্টের প্রসিডিউর, যেহেতু আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছুটা বাকবিতণ্ডা হলো।’
তখন প্রত্যুত্তরে উচ্চস্বরে জহিরুল ইসলাম পলাশ বললেন, ‘আপনার চেয়ে আমি এই বারে আগে এসেছি। আমি প্রসিডিউর ভালো বুঝি। আপনার ব্যবহার সবচেয়ে খারাপ। আপনি অনিয়ম করেন। আমরা খুলনা বারে ২০০০ জন, আর আপনারা মাত্র ৫০ জন। আমি আপনাকে চিনি। আপনার বাড়ি চিতলমারী। আমার বাড়িও চিতলমারী। আমি... (অমুক) এর ছেলে। আপনাকে আমি ভালো করে চিনি। আপনার বিরুদ্ধে আমি চিফ জাস্টিসের কাছে যাবো। আপনি আমাকে ইংলিশ শোনান। বারের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিতে কাজ হবে না। এমন অনেক বিচারক ছিলেন যারা এখান থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ারও সময় পান নাই, এটা মনে রাইখেন। আপনি আপনার ফিউচারের জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, জহিরুল ইসলাম পলাশ উচ্চস্বরে এমন বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবীর এমন আচরণে বিব্রতবোধ করায় মামলাটি খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করি।
চিঠিতে বিচারক বলেন, আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশ সেদিনই ফেসবুক লাইভে আসেন এবং আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা ও কোর্ট প্রসিডিউরকে পাশ কাটিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। তিনি আমাকে দুর্নীতিবাজসহ আরও অনেক বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট এবং সম্মানহানিকর বক্তব্য দেন।
এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস