কীভাবে সালাম মুর্শেদী বাড়ি দখল করলেন তা দুদককে তদন্তের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৭ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৪
সালাম মুর্শেদী, ফাইল ছবি

খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশান-২ এর বাড়িটি ৩ মাসের মধ্যে ছাড়তে হবে। তবে একই সঙ্গে পরিত্যক্ত এ সম্পত্তি কীভাবে সালাম মুর্শেদী দখল করলেন এবং এ প্রক্রিয়ায় আর কারা জড়িত তা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীনভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন।

আরও পড়ুন

আদালত বলেছেন, রায় প্রকাশের পর তিন মাসের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর বাড়িসহ গুলশান ২ এর ১০৪ নম্বর রোডের বাড়িটি বুঝিয়ে দিতে হবে আবদুস সালাম মুর্শেদীকে। আর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ৩ মাসের মধ্যে বাড়িটি বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে আদালত পরিত্যক্ত এ সম্পত্তি কীভাবে সালাম মুর্শেদী দখল করলেন এবং এ প্রক্রিয়ায় আরও কারা জড়িত, তা দুদককে স্বাধীনভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে আজ সালাম মুর্শেদীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক।

রায় ঘোষণার পর রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, সালাম মুর্শেদীর গুলশানের যে বাড়িটি সেটি আসলে পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এটি নিয়ে দীর্ঘ শুনানির পর আজ রায় দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন-এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সরকারের তালিকায় রয়েছে। তাই এটি হস্তান্তর (সালাম মুর্শেদীর কাছে)সম্পূর্ণ অবৈধ।

আরও পড়ুন

এছাড়া আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এটি বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবরে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭ এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।

রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়েছে।

২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল পূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেওয়ায় ফের ২০২২ সালের ৪ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে ভবনটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে সেটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।

রিটের পর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন। রুলে বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলে রাখার অভিযোগে আবদুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। আর বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

পরে পাশাপাশি আদেশ ও কোর্টের কার্যক্রম ছাড়া এ মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা না করতে উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আদালতকে জানান, আদালতের নির্দেশের পর বাড়িটি নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে বাড়িটির বিষয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষীর ভিত্তিতে দুদক সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি মামলা করেছে। এখন মামলাটি তদন্তনাধীন। পরে এ সংক্রান্ত রুলের ওপর ৩ মার্চ শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।