বেইলি রোডে আগুনের ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে (ডিসি)। ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে এই লিগ্যাল নোটিশ।
রোববার (৩ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার সংশ্লিষ্টদের এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী নিজেই।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন নিহত হন। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২ জন, যারা শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, বেইলি রোড একটি ব্যস্ততম এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ নানান শ্রেণির মানুষ এই রোডের আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন। ওই ভবনে আগুনের ঘটনার খবর ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। তাতে বলা হয়, যে ভবনে আগুন লেগেছে সেখানে রেস্টুরেন্ট পরিচালনার অনুমোদন ছিল না।
ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ভবনটির অনুমোদন আটতলার। শুধু আটতলায় আবাসিক স্থাপনার অনুমোদন আছে। সেটিতে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না।
নোটিশে বলা হয়, ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার সতর্ক করে নোটিশ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। যার ফলে কর্তৃপক্ষের দায় ও ব্যর্থতা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ কোনোমতেই তাদের দায় এড়াতে পারে না।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী প্রত্যেকের জীবন ধারণের অধিকার রয়েছে ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৬ অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের নিরবিচ্ছন্নভাবে চলাফেরার অধিকার রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা না করায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণেই এই অগ্নিকাণ্ড হয়েছে এবং ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ কোনোক্রমেই তাদের দায় এড়াতে পারে না। ঠিক কার ব্যর্থতার কারণে এই অগ্নিকাণ্ড- তা খুঁজতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি করা হয়।
এছাড়া ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের চিহ্নিত করে প্রত্যেককে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। নোটিশ গ্রহণের পাঁচদিনের মধ্যে কী ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে নোটিশ দাতাকে জানাতে বলা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার বলেন, নোটিশগ্রহীতাদের ব্যর্থতার কারণেই বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে নিরীহ ও নিরপরাধ ৪৬ জন মানুষের প্রাণহানি হলো এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। যেহেতু কর্তৃপক্ষ ভবন মালিককে তিনবার সর্তকতা নোটিশ দিয়েছিল কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি, সেহেতু কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা রয়েছে।
তিনি বলেন, নোটিশ পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে রিট করা হবে।
এফএইচ/কেএসআর/এএসএম