সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট নিয়ে সরব আওয়ামী লীগ, নীরব বিএনপি-জামায়াত
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সেশনের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় মনোনয়নপত্র বাছাই ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর ৬ ও ৭ মার্চ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সমিতির নির্বাচনে বরাবরই মূলত দুটি প্যানেলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে- আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা হিসেবে পরিচিত) মনোনীত প্যানেল। অন্যটি, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল হিসেবে পরিচিত)।
১১ ফেব্রুয়ারি সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নূরের সই করা এক নোটিশে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল ঘোষণার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্যানেল ঘোষণা করেছে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য প্যানেল এখনো নির্বাচন নিয়ে কোনো আওয়াজ তুলেনি। তারা ধীরে চলো নীতিতে সিদ্ধান্তে আসতে চাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। যদিও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঠিক করেছেন।
কিন্তু বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এখনো দলীয়ভাবে কোনো মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেনি কোনো প্রার্থীও ঠিক করেনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর কক্ষে বসে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কাকে কীভাবে প্রার্থী করা হবে নির্বাচনের কলাকৌশল কী হবে তা নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভুঁইয়া, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল উপস্থিত ছিলেন।
তবে, কাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে তা এখনো পুরোপুরি ঠিক করা হয়নি। জানা গেছে, দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রার্থী ঠিক করা হবে। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কমিশন কেমন হবে তা দেখে পর্যবেক্ষণ করে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশন কেমন হবে তা পর্যবেক্ষণ করে আলাপ আলোচনা করে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিশন গঠন করার পরে আমরা দেখবো। আগে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। তা দেখে দলীয় ফোরামে আলাপ আলোচনা করে প্রার্থিতা ঠিক করা হবে।
আপনারা নির্বাচনে যাবেন এমন একটি আলোচনা রয়েছে এর জবাবে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো বারের ভোট গ্রহণের বিষয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত কমিশন গঠন করা। ওই কমিশনটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয় সেটা দেখার পরে আমরা ভেবে দেখবো ভোটে যাবো কি না। তিনি বলেন, পার্টির সভাপতি ও মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সর্বোচ্চ আদালতের বারের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভুঁইয়া বলেন, যথাসময়ে জানবেন। খুব শিগগির মিটিংয়ে হবে, সম্ভবত কাছাকাছি সময়ে জানতে পারবেন। আর প্রাথমিকভাবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর কক্ষে বসেছিলাম। তিনি জানান, আমরা আমাদের প্যানেল ঠিক করার জন্য খুব সম্ভবত দু-একদিনের মধ্যে বসতে পারি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কাকে কীভাবে প্রার্থী করা হবে নির্বাচনের কলাকৌশল কি হবে তা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঠিক করেনি, এটা আমাদের কৌশল। আগের দুই বছরের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত, তাই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবীদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি। সজল বলেন, এবার আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন চোরদের (আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটি) বিদায়ের। তবে চোরদের বিদায় দিয়ে যেন ডাকাতদের না আনা হয় সে জন্য অপেক্ষা করছি, দেখি।
গত নির্বাচনে সম্পাদক পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘২০২২ সালে নির্বাচনের ৪২ দিন পর তালা ভেঙে নিজেরা ঘোষণা দিয়ে সম্পাদকের কক্ষ দখলে নিয়েছিল। আর গত বছর পুলিশ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। যেখানে সাধারণ আইনজীবী এমনকি সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। এটা কোনো নির্বাচন ছিল না। আশাকরি, এবার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠন করা হবে।
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু গত দুটি নির্বাচনের পর বর্তমানে কেমন ভোট হয় এসব নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। আর দলীয়ভাবে ‘বিএনপি সমর্থক ও অন্যান্য আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন সঠিক না হলে নির্বাচন ভালো হবে না। তাই আমরা আলাপ আলোচনা করছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছে। আমরা চাই, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। তার পরে নির্বাচনে যাবো।
নির্বাচন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি বলেন, আমি নির্বাচনে প্রার্থী হবো। প্যানেলভুক্ত না কি আলাদাভাবে ভোট করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচন করবো এটা জানি। তবে এটা জানি না একাই করবো না কি প্যানেলভুক্ত। কিন্তু অনেকেই তো প্যানেল পছন্দ করেন না। এবারের নির্বাচনে সম্পাদক পদে লড়বেন বলে জানান তিনি।
এদিকে সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ সাগর আর সম্পাদক পদে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট রমজান আলী শিকদার ও অ্যাডভোকেট ড. দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, ট্রেজারার পদে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর সদস্য পদে লড়বেন অ্যাডভোকেট সৌমিত্র সরদার রনী, অ্যাডভোকেট মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট রাশেদুল হক খোকন, অ্যাডভোকেট মাহমুদা আফরোজ, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন শাহীন, অ্যাডভোকেট খালেদ মোশাররফ রিপন ও অ্যাডভোকেট রায়হান রনি।
এফএইচ/এমএএইচ/এমএস