সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চায় ‘ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলন’
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও প্যানেলমুক্ত সুপ্রিম কোর্ট বারসহ গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ‘ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আইনজীবীরা এই দাবি জানান।
গণমুখী, আধুনিক ও দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা এবং সুসংহত, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বার গঠন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন দলীয় নমিনেশন এবং প্যানেলমুক্ত স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি তোলা হয়েছে নির্দলীয় ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলনের পক্ষ থেকে।
এসব দাবিসহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ঐক্যবদ্ধ ও দলীয়মুক্ত করতে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র চরম বিভ্রান্তিমূলক। এ পর্যন্ত দাখিলকৃত বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব সম্পাদকরা নিজ স্বার্থ হাসিলের নিমিত্তে বাস্তবায়ন করেননি, যা চরম লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘নির্দলীয় ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলন’র আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দৃঢ় প্রত্যয় আমাদের অনন্য ইতিহাসেরই অংশ। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার অবস্থান ছিল উচ্চতার চরম শিখরে। কিন্তু অবক্ষয়িত সমাজ ব্যবস্থার চাপে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরস্পরের প্রতি আস্থা হারিয়ে বন্ধু নয় শত্রুতার গভীরে ডুবে গেছি আমরা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। বর্তমানে আইনজীবী সমাজ নই, বিবাদমান একটি গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়েছি আমরা। ব্যক্তিগত সম্মান এবং পেশাগত মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে এক অদ্ভুত নেশার ফেছনে ছুটছি। কিন্তু বেশিরভাগ আইনজীবী এজন্য দায়ী নন, তারা শুধু পরিস্থিতির স্বীকার। দেশ ও জাতির স্বার্থে সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং আইনজীবীদের মর্যাদা সমুন্নত করার জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী বার, যা গণমুখী ও আধুনিক বিচারব্যবস্থার পূর্বশর্ত। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দলের প্রভাবে অত্র আইনজীবী সমিতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক মর্যাদা ও সম্মানবোধ শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের বিচারব্যবস্থা সংবিধানের সর্বশেষ রক্ষাকবচ। আর বিচারব্যবস্থার রক্ষাকবচ হচ্ছে ‘আইনজীবী সমিতি’। বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দলীয় রাজনেতিক কোন্দলে নিপাতিত। এ অবস্থার উত্তরণ অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্যে আমরা ১১ দফা ঘোষণা করছি।
ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলনের ১১ দাবি
১. সমিতি অঙ্গনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করতে হবে।
২. সমিতির নির্বাচন দলীয় নমিনেশন এবং প্যানেলমুক্ত করতে হবে।
৩. সমিতির নির্বাচন সম্পাদনের জন্য ইলেকশন সাব-কমিটির পরিবর্তে আর্থিক ও ভোটার লিস্ট তৈরি করার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
৪. সমিতির নিয়মিত, অনিয়মিত এবং সহযোগী সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করে শুধু নিয়মিত সদস্যদের নিয়ে ভোটার লিস্ট তৈরি করতে হবে।
৫. সমিতির নির্বাচনে মনোনয়ন ফি বাতিল করতে হবে।
৬. কোনো আইনজীবী একই পদে দুই বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না।
৭. কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে কিউবিক্যাল বরাদ্দ করতে হবে।
৮. সমিতির আয়-ব্যয়ের হিসাবের স্বচ্ছতার জন্য ই-ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৯. সভাপতি ও সম্পাদকের কার্য ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন করতে হবে।
১০. সমিতির নতুন সদস্য ভর্তির ক্ষেত্রে সদস্য ফি নির্ধারিত বার্ষিক চাঁদার অতিরিক্ত হতে পারবে না।
১১. উপরোক্ত প্রস্তাবসমূহ কার্যকর করার জন্য গঠনতন্ত্রে বিদ্যমান অনুচ্ছেদসমূহের বাস্তবায়নসহ প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্দলীয় ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলহাজ এম এ মজিদ, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব ড. অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস