ভোটগ্রহণ ৬ ও ৭ মার্চ
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি তফসিল
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ সালের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি তফসিল ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাডহক কমিটি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার (অ্যাসোশিয়েশনের) সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল এবং অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদলের সই করা নির্বাচন সংক্রান্ত পৃথক নোটিশে দুটি তফসিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে অ্যাডহক কমিটি ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পাল্টাপাল্টি তফসিল ঘোষণা নিয়ে আইনজীবীদের নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সরকার সমর্থক ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থান ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আদালত অঙ্গন উত্তপ্ত হয় এবং নির্বাচনের প্রথমদিন সুপ্রিম কোর্ট বারে পুলিশ প্রবেশ করে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করায় দেশে বিদেশে সব মহলে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
এবারও যাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত অঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য একটি দক্ষ, নিরপেক্ষ এবং শক্ত নির্বাচন সাব কমিটি চান এ অঙ্গনের আইনজীবীরা। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বারকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে বলে মনে করেন তারা। তারা বলছেন দল যার যার বার সবার।
‘সর্বোচ্চ আদালতে বারের নির্বাচন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ বিরাজ করছে। তাই সবার মুখে মুখে আলোচনা এবার কেমন ভোট হবে।কিন্তু তার মধ্যে জন্ম হলো নতুন আলোচনা। তা হলে কী ভোট নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
এ বিষয়ে এ বারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, এ নির্বাচন হওয়ার জন্য একটি দক্ষ, নিরপেক্ষ এবং শক্ত নির্বাচন সাব কমিটি করতে হবে। এবং নির্বাচন সাব কমিটিকে সর্বোত্তভাবে সহায়তা করতে হবে। বারটাকে এখানে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এর আগে সাবেক বিচারপতি মো. মনসুরুল হক চৌধুরী প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের অনুরোধে নির্বাচন উপ-কমিটির আহ্বায়ক হতে রাজি হন। কিন্তু তিনি ঠিক মতো নির্বাচন করতে যে কাজটি করার দরকার তিনি করতে পারেননি। এ কারণে তিনি পদত্যাগ করেন। সবাই সেটা জানে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার পর পৃথক আরও একটি তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল জাগো নিউজের সঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত পৃথক নোটিশে আমরা আগে তফসিল ঘোষণা করেছি। তার কারণ গত দুই বছর আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন প্রথমে গত (২০২৩) সালের নির্বাচনের আগের নির্বাচনে (২০২২ সালে) সেক্রেটারি পদ তালা ভেঙে ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।
আমরা দল নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করতে চাই। যদি নিরপেক্ষ ভোটের কোনো সিদ্ধান্ত হয় সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে বলে জাগো নিউজকে জানান তিনি।
দুই পক্ষে নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ১২ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ঘোষণা করা হয়।
কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহ-সভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহ-সম্পাদক পদে দুটি এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে সাতটি পদসহ সর্বমোট ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত সমিতির ২০২৩-২০২৪ সেশনের নির্বাচন নিয়েও পাল্টাপাল্টি নির্বাচন উপ কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। তখন সমিতির কার্যকরী কমিটির সিনিয়র সহ সম্পাদক (বিএনপি সমর্থিত) মাহফুজ বিন ইউসুফ আইনজীবী ড. এজেডএম ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের উপ কমিটি ঘোষণা করেন।
সমিতির সম্পাদক (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) আবদুন নূর দুলাল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাদ সদস্যের উপ কমিটি ঘোষণা দেন।
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মুখোমুখি স্লোগানে উত্তপ্ত হয় আদালত অঙ্গন।
আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আলাদা নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি ঘোষণা করে পাল্টাপাল্টি তফসিল ঘোষণা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বিবদমান দুই পক্ষকে নিয়ে গত বছরের ২ মার্চ বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠক থেকেই সুপ্রিম কোর্টর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীকে প্রধান করে উপ-কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে সমিতির কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের আগের দিন অসহযোগির অভিযোগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান মো. মনসুরুল হক চৌধুরীর আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন।
এরপর গত বছরের ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিনে দিনব্যাপী বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র ও আইনজীবীদের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জ ও মারধরের শিকার হন সাংবাদিক ও আইনজীবী।
এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস