গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে আপিল করার নির্দেশ
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ২০১১-১২, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে করবর্ষের আয়কর আপিল ফাইল করতে আয়করের ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করে আপিল আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
২৫ শতাংশ টাকা জমা দেওয়া সংক্রান্ত নির্দেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন।
একই সঙ্গে বলেন, আইন অনুযায়ী যে অর্থটা দেওয়ার দরকার সেটা এনবিআরকে দিতে ড. ইউনূসকে বলা হয়েছে। এখানে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই বলেছেন আদালত।
সহকারী অ্যাটর্নী জেনারেল ব্যারিস্টার তাহমিনা আক্তার জানান, ২০২০ সালে নভেম্বরে ২০১১ থেকে ২০১৩ দুই বছরের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয়কর দাবি করে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্টকে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কাছে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট অর্থ নেই বলে মওকুফ চান। ওই আবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রিজক্টে করার পরে তারা আয়করের টাকা মওকুফ চেয়েছিলেন।
কিন্তু তখন তাদের একটি অ্যাকাউন্টেই প্রায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্টে অর্থ রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ অর্থ চেয়ে নোটিশ করার পর কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম এ নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে নোটিশ কেন বেআইনি বলা হবে না এ নিয়ে রুলও জারি করে আদালত।
এরপর গত তিন বছরে বিভিন্ন আদালত ঘুরে মামলাটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আসে। আজ সেটি শুনানি শেষে গ্রামীণ টেলিকমের রিট আবেদন খারিজ করেদেন আদালত। সেই সাথে গ্রামীণ টেলিকমকে আদেশ দেন নিয়ম অনুযায়ী দাবিকৃত আয়করের ২৫ শতাংশ টাকা আগে জমা দিয়ে এরপর এনবিআরের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে।
এর আগের রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্ট জানিয়েছিল ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের ১,১০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন ড. ইউনূস, জানান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টা তাহমিনা আক্তার।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ২০১১-১২, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে আয়করের ৫০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার পর আপিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা এক মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনুস এবং এর পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাদের চারজনকেই ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ২৫ দিন কারাদণ্ড দেন আদালত। আর রায়ের পরই পৃথক জামিন আবেদন করলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চারজনকেই জামিন দেন আদালত।
গত ১৬ নভেম্বর মামলাটিতে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ। তারও আগে গত বছরের ৬ জুন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে রাষ্ট্রপক্ষের চার সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এসএম আরিফুজ্জামান। নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট আইএফইডি কর্মকর্তারা রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের অফিস পরিদর্শন করে শ্রম আইনের সঙ্গে কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান।
তার পরে ২৮ জানুয়ারি সকালে আপিল করেন ড, ইউনূসসহ চার জন। ওই দিন ড. ইউনূসসহ চার আসামি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন ও আপিল করেন। শুনানি নিয়ে দণ্ড স্থগিত করে আপিল শুনানির জন্যে গ্রহণ করে নথি তলব করেন শ্রম আপিলের ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে শুনানি ৩ মে শুনানির জন্যে ঠিক করেন।
এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম