শিশু আয়ানের মৃত্যু: সুরতহাল করেনি কেন, প্রশ্ন হাইকোর্টের
সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুনানিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন উপস্থাপন শুরু করলে আদালত জানতে চান শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় সুরতহাল করা হয়েছিল কি না। এ সময় তিন পক্ষের (রাষ্ট্র, রিটকারী ও হাসপাতালের) আইনজীবী সমস্বরে বলেন না। তখন আদালত বলেন, মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার জন্য সুরতহাল রিপোর্ট করা প্রয়োজন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিন ধার্য দিনে স্বাস্থা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আসা প্রতিবেদন এফিডেভিড আকারে জমা না দেওয়ায় এ সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
ইউনাইটেড হাসপাতালের আইনজীবী কুমার দেবুল দে বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য রোববার (২৮ জানুয়ারি) দিন ঠিক করেন আদালত। নির্ধারিত দিনে প্রতিবেদন দাখিলের প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি জানিয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিন ঠিক করেন আদালত।
এর আগে চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলায় আয়ানের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করার পর এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর আয়ান নামে পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা কীভাবে ও কোন কারণে ঘটেছে তা যথাযথ অনুসন্ধানে গত ১৫ জানুয়ারি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলা পেলে জড়িত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন>> ইউনাইটেডে শিশু আয়ানের মৃত্যু: রিটের শুনানি শেষ, আদেশ ১১ ফেব্রুয়ারি
শিশুটির বাবা শামীম আহমেদের করা রিট আবেদনের প্রাথমিকভাবে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া (আরজু)। এসময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ জানুয়ারি জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করা হয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর আনন্দ নিয়েই রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অনুমতি ছাড়াই ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সুন্নতে খতনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরে না তার।
স্বজনরা জানান, আয়ানের সুন্নতে খতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন।
টানা সাতদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস