জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে শুনানিতে যা বললেন আদালত
হাইকোর্টে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দায়ের করা লিভ টু আপিলের শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়ে আগামী ১৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১২ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সময় চান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও আইনজীবী আহসানুল করিম। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
জামায়াতের বিষয়ে শুনানিতে প্রথমেই অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা আট সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেছি। তখন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় আমরা দিতে পারবো না।
তখন জামায়াতের আইনজীবী বলেন, আমাদের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর পার্সোনাল গ্রাউন্ডে সময় আবেদন করছি। তখন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, অকার্যকর হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন>> জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে শুনানি ১৯ নভেম্বর
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদন দুটি শুনানির জন্য একই দিন ঠিক করেন আদালত। এর আগে সর্বশেষ ৬ নভেম্বর আবেদন দুটি শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ১২ নভেম্বর দিন রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকার ৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
লিভ টু আপিলের (জামায়াতের করা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) পক্ষে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য আট সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান। অন্যদিকে জামায়াতের বিরুদ্ধে করা আবেদনের পক্ষে শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমির বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও আদালত অবমাননার বিষয়ে পৃথক আবেদন শুনানি হওয়া প্রয়োজন।
এরপর আদালত সোমবার (১৩ নভেম্বর) দিন ঠিক করেন। তখন জামায়াতের আইনজীবী বলেন, এ দুটি বিষয়ে আমাদের সময় প্রয়োজন। তখন আদালত জামায়াতের নিবন্ধনের আপিল, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও আদালত অবমাননার বিষয়ে আইনজীবীদের শুনানি নিয়ে আগামী রোববার (১৯ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেন। একই সঙ্গে আদালত এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা পরবর্তী সময়ে আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
এছাড়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আরেকটি লিভ টু আপিল করে। এই লিভ টু আপিল রিডানডেন্ট (প্রয়োজনীয়তা নেই) ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। জামায়াতের করা আপিলের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াতকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদন দুটি ১৯ নভেম্বর একসঙ্গে শুনানির জন্য আসবে।
এর আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটকারী মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ তিনজন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১০ বছর পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গত মাসে পৃথক আবেদন করে।
গত ২৬ জুন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত আবেদনগুলো শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। এরমধ্যে আরও ৪২ জন পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন। যারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজন।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত লিভ টু আপিলে (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) বক্তব্য দিতে ৪৭ ব্যক্তি আবেদন করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, আবেদনকারী ৪৭ নাগরিকের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সাহানারা বেগম, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কোরবান আলী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম উমার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমান ও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন। এরপর নানান আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চেম্বার আদালত।
পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ওই আপিল শুনানিতে উদ্যোগ নেয় রিটকারী পক্ষ। সে অনুসারে আপিলটি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কার্যতালিকায় ওঠে।
এরপর ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দেন।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস