দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম
৪০১ ধারায় খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না, তবে...
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়ে সীমিত ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন। এর বাইরে যাওয়ার কোনো আইনি এখতিয়ার সরকারের নাই। কারণ এটা একমাত্র আদালত ব্যাখ্যা দেবেন। আর দুদকের মামলায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে যদি নিতেই হয় তা হলে ৪০১ ধারায় তো প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হলে আপিল বিভাগে গিয়ে বলতে পারে একটা পৃথক দরখাস্তের মাধ্যমে। তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দেখছি ওনারা সেই দিকেও যাচ্ছে না। খালি সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।
সোমবার (২ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
দুদকের প্রধান আইনজীবী বলেন, আমার কথা হলো একটাই সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। সেই সীমিত ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন সরকার। এর বাইরে যাওয়ার কোনো আইনি এখতিয়ার সরকারের নাই। কারণ এটা একমাত্র আদালত ব্যাখ্যা দেবেন। আর আদালতের ব্যাখ্যা সরকার, খালেদা জিয়া ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সবার ওপর।
কাজেই মেডিকেল ট্রিটমেন্ট যদি তারা চাইতেন তা হলে দুটো আপিল মামলা পেন্ডিং আছে, ওনারা যদি সেগুলো শুনানির চেষ্টা করতেন তা হলে মামলাগুলো দ্রুত শুনানি করতেন।
আরও পড়ুন>কোথায় আছেন বাহে, সবাই জেগে উঠুন: ফখরুল
খুরশীদ আলম খান বলেন, আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা ঠিকই আছে, তবে আমি এর সঙ্গে একটু যোগ করতে চাই, ৪০১ ধারার উপধারা-১ দুদকের মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই হবে না। এমনি আদেশে যেটা দিয়েছেন সরকার, সেটা নির্বাহী আদেশের সর্বোচ্চতম সরকার (সংশ্লিষ্টরা)করেছেন মানবিক কারণে। যেহেতু করোনাকালীন পুরো পৃথিবীতে একটা ভয়ংঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছিল। সেখান থেকে সরকার এটা এক্সারসাইজ করছে। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতিতে যে ঘটনাটি হলো যেমন, খালেদা জিয়ার অবস্থা খারাপ। তারা (বিএনপির আইনজীবীরা) বলছেন জীবন মরণ সন্ধিক্ষণে, দেশীয় হাসপাতালে ওনার ট্রিটমেন্ট সম্ভব না বা ওনাকে বিদেশে নিতে হবে, চার-পাঁচটা দেশের নামও বলেছে। সেই ক্ষেত্রে যদি ওনাকে (খালেদা জিয়াকে) বিদেশে নিতেই হয় তা হলে ৪০১ ধারায় তো প্রশ্নই আসে না। কাজেই আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন, এটাকে আমি বর্তমানে প্রপার ইন্টারপিটিশনে বলবো-কিন্তু বর্তমানে বিচারাধীন বিষয় আছে বেগম খালেদা জিয়ার দুটো মামলার। একটিতে তার ৫ বছরের সাজা হাইকোর্ট ডিভিশনে বহাল রেখেছেন, তার বিপরীতে লিভ টু আপিল আছে। আর দুদকের করা আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ বছরের সাজা ১০ বছর করা হয়েছে সেটাও আপিলেড ডিভিশনে পেন্ডিং, আবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের যে সাত বছরের সাজা সেটারও হাইকোর্ট ডিভিশনে পেন্ডিং আছে, আপিল।
তিনি বলেন, সবকিছুর চেয় বড় সত্যি তারা কোনো মামলারই নিষ্পত্তির দিকে আগাচ্ছে না বা তাদের অনিহা। কিন্তু তারা সরকারের যে নির্বাহী আদেশ তার ওপরেই নির্ভর করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে চাচ্ছেন। আমার কথা হলো বিচারাধীন বিষয়ে সরকার যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছে সেটা অনেক বেশি দিয়েছে। সরকার, ক্ষমতার যতোটুকু এক্সারসাইজ করেছে,আইনের বাইরেই গিয়েও সরকার কাজটি করেছে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
খুরশীদ আলম বলেন, কিন্তু কথা হলো তারও তো একটা লিমিটেশন আছে। নির্বাহী বিভাগ দ্যাট মিন সরকার বিচারাধীন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং এই তিনটি মামলায় জিয়ার অরফানেজ জিয়া ও জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট লিভ টু আপিল। আপিলের এখানে সরকারও পক্ষ। যেখানে সরকার পক্ষ, সেখানে সরকারের কাছে নির্বাহী বিভাগের আবেদন কীভাবে করে বলেও প্রশ্ন তোলেন দুদক আইনজীবী?
তিনি বলেন, ৪০১ ধারায় বলা আছে ‘সাসপেনশ্যান, রেমিশ্যান এবং কমিটিশ্যান অফ দ্যা সেন্টেন্স’ এই তিনটা ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য, এর বাইরে প্রযোজ্য না। কাজেই মেডিকেল টিট্টমেন্ট ও শাস্তির সিচুয়েশনে ডিফারেন্ট ইস্যু। প্রপার কোর্টে যে আদালতে মামলা পেন্ডিং সেই আদালতে বলতে হবে। বর্তমানে তিনটি আপিল পেন্ডিং ওনারা শুনানির জন্য কোনো স্টেপ নিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন>বিদেশে খালেদার চিকিৎসার আবেদন নাকচ রাজনৈতিক: কায়সার কামাল
এর আগে ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে তাকে আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন তাহলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এ জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান তারা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদের (বিএনপি) যদি চাইতে হয় তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে কারাবন্দি হন তিনি। পরে হাইকোর্টে এ সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
এফএইচ/এসএনআর/এএসএম