স্বপ্নপূরণের আশায় ১৪ বছর অপেক্ষা আইনজীবী রাজ্জাকের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আইনজীবী হিসেবে ২০০৪ সালে তালিকাভুক্ত হন গাইবান্ধার আব্দুর রাজ্জাক। ঢাকা বারের সদস্য হয়ে করেছেন প্যাকটিসও। নিজ এলাকা গাইবান্ধায় স্থায়ী হতে ২০১০ সালে বার পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিতে ভর্তির জন্য দশ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। টাকা দেওয়ার পরও আইনজীবী সমিতিতে ভর্তি তো দূরের কথা, উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। পরে তিনি গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে অভিযোগও করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছর আইনি লড়াই শেষ করে বিজয়ী হন আব্দুর রাজ্জাক। এ ১৪ বছরে হাইকোর্টের বিচার শেষ করলেন তিনি।

জানা যায়, ২০১০ সালের গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতিতে ভর্তির আদেশ পান আব্দুর রাজ্জাক। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল বার কাউন্সিল এই আদেশ দেয়। এজন্য এ সংক্রান্ত একটি পত্র ইস্যু করা হয়। সেই পত্র মোতাবেক আব্দুর রাজ্জাক জেলা আইনজীবী সমিতিতে ভর্তি হতে দশ হাজার টাকা জমা দিলেও তাকে ভর্তি করেনি গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতি। আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ- তাকে ভর্তি না করে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তখন বার কাউন্সিলে একটি আপিল মামলা করেন। এরপর হয়রানি আরও বাড়লে আব্দুর রাজ্জাক গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবর আবারও নোটিশ পাঠান।

পরে তিনি বার কাউন্সিলের আপিল নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়ে রিট করেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১৪ মে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে আব্দুর রাজ্জাককে হয়রানি না করতে এবং বার কাউন্সিলের আপিল মামলা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের আদেশের পর বার কাউন্সিল ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রাজ্জাককে গাইবান্ধার জেলা আইনজীবীতে সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেয়। আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ, বার কাউন্সিলের আদেশের পরও গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতি তাকে সদস্য হিসেবে যুক্ত করেনি।

এরপর রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে ২০১৮ সালের ২০ মে আরেকটি রিট করেন আইনজীবী রাজ্জাক। শুনানি শেষে ওই বছরের ২৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করেন।

২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আব্দুর রাজ্জাককে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিতে সদস্য করে নিতে আদেশ দেন আদালত।

দীর্ঘ ১৪ বছর আইনি লড়াই করে জয়ী আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে, বার কাউন্সিল তাদের অধীনে থাকা বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ ছিল। এ ব্যর্থতাকে দূর করতে পেরেছে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে। দীর্ঘ ১৪ বছরে আমি অর্থও খরচ করেছি। পাশাপাশি মানসিকভাবেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই এর দ্রুত সমাধান হলে মানসিকভাবে শান্তি পাবো।’

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট বারে নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন আব্দুর রাজ্জাক। বসছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের এনেক্স ভবনের ২০০৮ নম্বর রুমে। এখন তিনি নিয়মিতভাবে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিতে আইনি প্র্যাকটিস করতে চান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বাদল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বার কাউন্সিল থেকে সনদ দেওয়ার পরে আইনজীবীর বিষয়ে কোন বারের সদস্য হওয়ার জন্য নোটিশ করতে পারি। কিন্তু বাধ্য করতে পারি না। কারণ বার কাউন্সিলে এমন কোনো বিধান নেই। তবে,বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সামনে আইনজীবীদের প্যাকটিস নিয়ে মিটিং হলে বিষয়টি তুলবো। দেখা যাক কি সমাধান হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমপ্লেইন্ট অ্যান্ড ভিজিলেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশনকে এনফোর্স করতে পারি না। আমাদের গঠনতন্ত্রে নেই এটা। তবে আমরা একটি আদেশ দিলে সেই আদেশ নৈতিকতার সঙ্গে তাদের মানা উচিত। তারা না মানলে আমরা তাদের জোর করে মানাতে পারি না।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন আলম বলেন, আমি চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আর রাজ্জাক সাহেবের বিষয়টি অনেক পুরোনো। আমি অ্যাডভোকেট রাজ্জাক সাহেবের ফাইল না দেখে এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না।

বার পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো আইনজীবী বার পরিবর্তন করতে চাইলে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটি পরিবর্তন করতে হবে। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজ্জাক সাহেব আসতে চাইলে গাইবান্ধা বারের তো কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।

এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।