স্বামীর ঠিকানায় প্রাথমিকের ১০ শিক্ষকের যোগদানে ব্যবস্থার নির্দেশ
আদালতের আদেশপ্রাপ্তির পাঁচ দিনের মধ্যে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা প্রাথমিকের ১০ নারী শিক্ষিকাকে যোগদানের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া আরেক শিক্ষকের যোগদানপত্রও গ্রহণ করতে বলেছেন আদালত। আদর্শ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে এই ১১ জনের যোগদানপত্র গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জন শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর মশিউর রহমান, ফজিলত পারভিন, উম্মে কুলছুম, দিল আফরোজ, আমিনাতুর রহমানসহ ১১ জন শিক্ষক ওই রিট দায়ের করেন। রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়।
আদেশের পর রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, রিটকারীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রিটকারীদের মধ্যে একজন পুরুষ শিক্ষক এবং বাকি ১০ জনই নারী। রিটকারী মশিউর রহমানের স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায়, কিন্তু নিয়োগের সময় তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
অন্য ১০ জনই নারী শিক্ষক। তারা বিভিন্ন বিভাগ, সিটি করপোরেশন, জেলা এবং উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন বদলি বন্ধ থাকায় তারা বদলি হতে পারেননি। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি করার উদ্দেশ্যে ‘সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকা (সংশোধিত) ২০২২’ নামে বদলি নির্দেশিকা জারি করে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকরা তাদের স্থায়ী ঠিকানা এবং তাদের স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির জন্য আবেদন করেন।
তাদের আবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত মার্চ মাসে আবেদনকারীদের কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করে। বদলির আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রিটকারী শিক্ষকদের বদলি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য ছাড়পত্র দেন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা তাদের বদলি করা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে যান।
কিন্তু কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর যোগদানপত্র দাখিল করিতে গেলে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর রিটকারীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দুটি আবেদন করেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গত ১৬ জুলাই অপর একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে রিটকারী ১১ শিক্ষকসহ মোট ১৫ জন শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের প্রতি নির্দেশ দেন।
এরপরও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যার ফলে কোনো বিদ্যালয়ে কর্মরত না থাকায় রিটকারী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। পরে শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবার আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর ওই শিক্ষকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
এফএইচ/বিএ/এমএস