সংবর্ধনায় বিদায়ী প্রধান বিচারপতি
মহাকাশের মতো উদার হও, যেখানে কোনো সংঘাত নেই
নবীন আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, সৎ থেকো, পরিশ্রম করো, একদিন দেখবে অনেক বড় আইনজীবী হয়েছো। মহাকাশের মতো উদার হও, যেখানে কোনো জাতীয় সংঘাত নেই।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) তার বিচারিক কর্মজীবনের শেষ দিন বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নবীনদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন তিনি। ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। কিন্তু সেসময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার ছিল তার বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।
বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার চমৎকার শেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। শিখেছি আইনজীবীদের আলোচনা, যুক্তি, আইনি ব্যাখ্যা, ঘটনার বিশ্লেষণ করার কৌশল থেকে। চেষ্টা করেছি আপনাদের শুনে-বুঝে, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার। আমি প্রতিটি স্তরে বারের কাছে ঋণী। বার হলো বিচারকদের বিচারক। আমি সবসময় তেমনটিই ভেবেছি। আমি চেষ্টা করেছি ধৈর্যসহকারে শোনার, যত্ন সহকারে বিবেচনা করার, সঠিকভাবে বোঝার এবং ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত দেওয়ার। একজন রাজনীতিবিদ পরবর্তী নির্বাচনের কথা ভাবেন, একজন রাষ্ট্রনায়ক পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবেন আর একজন বিচারককে ভাবতে হবে সংবিধান ও আইনানুযায়ী ন্যায়বিচার করার কথা।
আরও পড়ুন>> বিদায় বেলায় কাঁদলেন প্রধান বিচারপতি
তিনি বলেন, আমি জুনিয়র আইনজীবীদের বলবো, তোমরা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো পরিশ্রমী ও শক্তিশালী হও, কিন্তু ভদ্রতাকে বিসর্জন দিয়ে নয়, দয়ালু হও কিন্তু দুর্বল নয়, সাহসী হও কিন্তু আদালতকে ধমকাবে না, চিন্তাশীল হও কিন্তু অলস হইও না, নম্র হও কিন্তু ভীরু নয়, গর্বিত হও কিন্তু অহংকারী নয়, হাস্যরসিক হও কিন্তু মূর্খতা ছাড়া। সৎ থাকো, পরিশ্রম করো, একদিন দেখবে অনেক বড় আইনজীবী হয়েছ। মহাকাশের মতো উদার হও, যেখানে কোনো জাতীয় সংঘাত নেই।
এখানে আমার ৪৩ বছরের পদচারণা আজ থেকে স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহাশক্তিতে বিশ্বাস করি, তিনি এ পবিত্র বিচারালয়, বিচারক, আইনজীবী, বিচারালয়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ষা ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করবেন। আমার কর্মকালীন সময়ে বিচারক, আইনজীবী, আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থ, জনপ্রশাসন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির প্রত্যেক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এবং সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা যে সহায়তা দিয়েছেন, তা আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সারাজীবন মনে রাখবো।
আরও পড়ুন>> প্রধান বিচারপতির শেষ কর্মদিবস, বিদায়ে যাবেন না আইনজীবীদের একাংশ
বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ বিদায়মুহূর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমার মরহুম বাবা-মাকে। আমার জন্য এবং আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য অপরিসীম কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করে তারা জান্নাতবাসী হয়েছেন। তারা আমার সংগ্রামের পথে সহায়তা করেছেন।
এ কথা বলেই প্রধান বিচারপতি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, কেঁদে ওঠেন। এক মিনিটের মতোও কথা বলতে পারেননি তিনি। এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত থাকা প্রধান বিচারপতির বড় মেয়ে, নাতি ও ছোট মেয়ের জামাইকেও কাঁদতে দেখা যায়। কিছু সময়ের জন্য এজলাস কক্ষের পুরো পরিবেশ নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। এরপর প্রধান বিচারপতি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমি বিচার বিভাগকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম এবং আমি চেষ্টা করেছি স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে।
এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম