‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’
খণ্ডিত বক্তব্য নিয়ে কথা বলছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা
জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বিচারকদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়া বিচারপতিদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়ে আসা আইনজীবীরা বক্তৃতার খণ্ডিত অংশ নিয়ে কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।
রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দুই বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে সরাতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে আইনি বিষয়ে ব্যাখ্যা করা, কথা বলা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীরা বিচারপতিদের বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ নিয়ে কথা বলছেন।’
তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি না শুনে, না বুঝে, না পড়ে ওনারা যা বলছেন, তা ঠিক নয়। উনি (বিচারপতি) যেটা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। কেবল বাংলাদেশ না, সব দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলিল হচ্ছে সংবিধান। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলিল হচ্ছে আমাদের সংবিধান।’
আরও পড়ুন>> আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি এস কে সিনহা প্রসঙ্গ
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বা সপ্তম সংশোধনী কিন্তু রাজনীতিবিদরা বাতিল করেননি। আদালত বাতিল করেছেন। সংবিধানের বাইরে যদি কোনো কাজ হয়, সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আদালতের সেটি দেখার দায়িত্ব। আদালত যদি মনে করেন কোনো বিষয় সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তখন সেটি আদালত বাতিলও করতে পারেন। এই দৃষ্টিতে ওনার (ওই বিচারপতির) বক্তব্যটা বিবেচনা করে দেখেন, ওনারা (বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা) যেটা বলছেন, সম্পূর্ণ ভুল বলছেন।’
জাতিয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দাবি সর্বোচ্চ আদালতের পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা হতে পারে উল্লেখ করে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি জানি না কী কারণে তারা এসব করছেন। আদালতের পরিবেশ বিনষ্ট করা বা উত্তপ্ত করার চেষ্টা হতে পারে। তবে এটা দেশের জন্য, মানুষের জন্য, বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য কখনোই ভালো হবে না।’
এর আগে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বিচারকদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়া বিচারপতিদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।
প্রধান বিচারপতির কাছে এ দাবি জানিয়ে তারা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। এসময়ের মধ্যে তা না করলে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। রোববার (২৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এ সংগঠনের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত শোকসভায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারকের বক্তব্য বিচারপতি হিসেবে নেওয়া শপথের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একজন রাজনৈতিক কর্মী যে ভাষায় বক্তব্য দেন, অনেক বিচারপতির বক্তব্যে তার প্রতিফলন আমরা লক্ষ করেছি। যারা নিজেদের রাজনীতিবিদ বিবেচনা করেন তারা ভবিষ্যতে কী ধরনের বিচার করবেন, তা বলাই বাহুল্য।’
আরও পড়ুন>> বিচারপতির বক্তব্য বিকৃত করে অরাজকতার অপচেষ্টা চলছে
‘এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।’ বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, ‘আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি যেহেতু শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার আইনি ও নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন, তাই তাদের বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
গত ১৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বিচারকদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। ওই অনুষ্ঠানেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ নিয়ে সমালোচনা করেন আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি।
এরপর থেকে এ দুই বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করে নানা কর্মসূচিও পালন করে আসছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
আবার দুই বিচারপতির পক্ষ নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা বলছেন, বিচারকদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে বিচারাঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এমন দাবি করছেন।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস