হাইকোর্টে শুনানির জন্য অপেক্ষা
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হবে বুলিং-র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি
বুলিং-র্যাগিং প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। ছাত্রীদের কাউন্সিলিং করার বিষয়টিও রয়েছে নীতিমালায়। বুলিং ও র্যাগিং এ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ/গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি/এডহক কমিটি/বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের কোনো সভাপতি/সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিধি, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারী আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনায় বুলিং-র্যাগিং প্রতিরোধে উচ্চ আদালতে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে অপমান করে বের করে দেওয়ার পর নিজ বাসায় আত্মহত্যা করে অরিত্রি। এরপরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে একটি সুয়োমোটো রুল ইস্যু করা হয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং-র্যাগিং প্রতিরোধে নীতিমালা বা গাইড লাইন তৈরি করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি জানান, এর মাঝে পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়েছে। প্রায় সাত থেকে আট বার খসড়া সবাই মিলে পর্যালোচনা করেছি। এরপর পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করার পর চূড়ান্তভাবে গত ২ মে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। তারপর গত ২৯ জুলাই আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখন আমার মতামত হলো, যেহেতু আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য র্যাগিং প্রতিরোধে কোনো ধরনের নীতিমালা ছিল না। এখন একটা হয়েছে, আমরা মনে করবো প্রাথমিকভাবে এটি একটি সফলতা। এরপরে এটি আরও সংযোজন, বিয়োজন করে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সুন্দর করা যাবে।
তিনি বলেন, নীতিমালাটি যখন শুনানিতে আসবে, তখন আদালতের কাছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা চাইবো যাতে করে তাদেরকে বলা হয় দেশের ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় বুলিং-র্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করার জন্য।
এই নীতিমালা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কতটুকু প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন জানতে চাইলে আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক আরও বলেন, আমি আশা করবো এই নীতিমালা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির বিচার এখন নিম্ন আদালতে চলছে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।
নরমাল বুলিং-র্যাগিং, ফিজিক্যাল বুলিং-র্যাগিং যদি স্কুলের বাইরে কেউ করে অর্থাৎ যদি কোনো শিক্ষার্থীর পাড়ার লোকও বুলিংয়ের মতো ঘটনা ঘটায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে বলে মত দিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বঃপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে ‘বুলিং’ ও শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরির জন্য অতিরিক্ত শিক্ষাসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেন আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী, এই কমিটি একটি নীতিমালা খসড়া করে ২০১৯ সালে আদালতে দাখিল করে। এরপর কয়েক দফা সংশোধন, পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজন হয়ে আসছিল।
এর মধ্যে ২০২১ সালে বুলিং নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মো. তানভির আহমেদের রিটে ওই বছর ২২ আগস্ট হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। ‘বুলিং’ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং রোধে নীতিমালা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা সংশোধন, পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজন করার পর সেটি চূড়ান্ত আকারে রুপ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের খসড়াটি চুড়ান্ত করে চলতি বছরের ২৯ জুন তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সচিব সোলেমান খান এই নীতিমালা প্রণয়ন করেন। সেটি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখার মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে পরর্বতী নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নীতিমালা সমূহ:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বুলিং ও র্যাগিংয়ের মত সামাজিক অপরাধসমূহ প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং অবসানের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক এই নীতমালা প্রণয়ন করা হলো:
১। শিরোনাম :
১.১ এ নীতিমালা ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ নামে অভিহিত হবে।’
১.২ এ নীতিমালা দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে।
১.৩ জনস্বার্থে এ নীতিমালা জারি করা হলো এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এই নীতিমালায়------
(ক) বলতে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা, পিতা-মাতার বর্তমানে আইনসম্মত অভিভাবককে বুঝাবে।
(খ) অশিক্ষক/কর্মকর্তা-কর্মচারী বলতে শিক্ষক ব্যতীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বুঝাবে।
(গ) কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য বিষয়ে কাউন্সিলিং এর জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট কোনো শিক্ষককে বুঝাবে।
(ঘ) কর্তৃপক্ষ বলতে
(১) নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং সরকার কর্তৃক এ উদ্দেশ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত/ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে।
(২) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ/ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি / এডহক কমিটি / বিশেষ কমিটি/প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বুঝাবে।
(৩) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ডসমূহ, বিশ্ববিদ্যালয়, মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুঝাবে;
(৩) বুলিং ও র্যাগিং বলতে নীতিমালার ৩ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ব্যাখাকে বুঝাবে।
(৫) শিক্ষক ‘বলতে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত /কর্মরত স্থায়ী/ সব শিক্ষককে বুঝাবে।’
(ছ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘বলতে বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে; এবং
(জ) শিক্ষার্থী বলতে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীকে বুঝাবে।
বাংলাদেশ গেজেট:
৩। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং:
৩। ১. মৌখিক বুলিং-র্যাগিং:
কাউকে উদ্দেশ্য করে মানহাকির/অপমানজনক এমন কিছু বলা বা লেখা যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে ইত্যাদিকে মৌখিক বুলিং বুঝাবে। যেমন-উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, শিস দেওয়া, হুমকি দেওয়া, শারীরিক অসামর্থ্যতাকে নিয়ে উপহাস করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
৩.২ শারীরিক বুলিং ও র্যাগিং:
কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড়-থাপ্পড় মারা, শরীরে পানি বা রং ঢেলে দেওয়া, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেওয়া, থুথু মারা, বেঁধে রাখা, কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে/বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া অথবা কোনো কিছু করতে বা না করতে বাধ্য করা, কারো কোনো জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
৩.৩. সামাজিক বুলিং ও র্যাগিং:
কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, পেশা, গায়ের রং, অঞ্চল বা জাত তুলে কোনো কথা বলা বা অনুরূপ কার্যাদি।
৩.৪ সাইবার বুলিং-র্যাগিং
কারো সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূ কিছু লেখা বা ছবি বা অশালীন ব্যঙ্গাত্মক কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
৩.৫ সেক্সুয়াল (যৌন) বুলিং ও র্যাগিং:
ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আপত্তিজনকভাবে স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন করা, আঁচড় দেওয়া, জামা-কাপড় খুলে নেওয়া বা খুলতে বাধ্য করা বা অনুরূপ কার্যাদি।
৩. ৬ উপরে বর্ণনা করা হয়নি এমন কর্ম আচরণ কার্যাবলী যা সম্মানজনক, অপমানজনক ও মানহানিকর এবং শারীরিক/ মানসিক যাতনার কারণ হতে পারে, তা যে নামেই হোক না কেন র্যাগিং হিসেবে গণ্য হবে।
৪। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন এবং কার্যপরিধি :
বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ৩-৫ সদস্য বিশিষ্ট বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি, অ্যান্টি বুলিং কমিটি (এবিসি) গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে।
৪.১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে আত্মহত্যা (সুইসাইড), বুলিং (বুলিং) ও র্যাগিং (র্যাগিং) সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের ইনজুরি প্রতিরোধ বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি (এবিসি) সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪.২. শিক্ষাবছরের শুরুতেই কমিটি আবশ্যিকভাবে এবং পরবর্তীতে ৩ মাস অন্তর নিয়ে মতবিনিময় সভা / সেমিনার / সিম্পোজিয়া, ওয়ার্কশপ আয়োজন করবে।
৪.৩ এই কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। পর্যবেক্ষণের জন্য বুলিং- র্যাগিং লগস তৈরি করবেন, প্রয়োজনে প্রশ্নমালা ব্যবহার করবে।
8.8. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও ব্লগিং প্রতিরোধে কমিটি প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত কমিটি অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫। বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের করণীয়:
৫.১ বুলিং এবং র্যাগিং উৎসাহিত হয় এরূপ কোনো কার্যকলাপ/সমাবেশ/অনুষ্ঠান করা যাবে না।
৫.২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব জায়গার বুলিং ও র্যাগিং হবার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে।
৫.৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (আবাসিক হলসহ) কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বুলিং ও র্যাগিং এর ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করবে: অন্যথায় নিষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী হবে।
৫.৪ বুলিং ও র্যাগিং এর উদাহরণ এবং পরিণতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে এবং প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে পোস্টারের মাধ্যমে প্ৰচার করবে।
৫.৫ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে একদিন প্রতিরোধ ‘দিবস’ পালন করে বুলিং ও র্যাগিং বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবে।
৫.৬ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা/শিক্ষক/অভিভাবকদের শপথ নিতে হবে। পাঠকৃত শপথ পালনে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করাবেন এই মর্মে যে, তারা কখনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বুলিং ও র্যাগিং করবে না, কাউকে বুলিং ও র্যাগিং এর শিকার হতে দেখলে রিপোর্ট করবে, প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
৫. বুলিং ও র্যাগিং এর কুফল সম্পর্কিত সিনেমা, কার্টুন, টিভি সিরিজ এর প্রদর্শন, অনলাইনে দায়িত্বশীল আচরণ সম্পর্কিত কর্মশালা ইত্যাদিসহ সহপাঠ্যক্রমিক কর্মশালা আয়োজনের নিমিত্ত কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫.৮ কর্তৃপক্ষ বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের ‘এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিজ’ এ অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। যেমন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে বিকশিত করা লক্ষ্যে বিতর্ক প্রতিযেগিতা, বিজ্ঞান মেলা, গণিত অলিম্পিয়াড, বই পড়ার প্রতিযোগিতা, দাবা, খেলা কেরাম খেলা ও খেলাধুলার আয়োজন করবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহমর্মিতা এবং সহানভূতিশীলতার শিক্ষা দিতে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী কাজে নিযুক্ত করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বুলিং/ র্যাগিং এর কুফল কিংবা এর ফলে কীভাবে একজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া জন্য এবং সেই সঙ্গে বুলিং ও র্যাগিং সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান তারা নিজেরাই বের করতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য শিক্ষকবৃন্দ (রোল প্লে) উপস্থাপন করবেন।
৫.১০ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট কোনো শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাউন্সিলিং এর দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। তাদেরকে ‘কাউন্সিলর’ হিসেবে অভিহিত করা হবে।
৫.১১ বুলিং ও র্যাগিং নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
৫.১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বুলিং ও র্যাগিং বিষয়ে পরীবীক্ষণ করবেন এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
৬। গৃহীত ব্যবস্থা:
৬.১ বুলিং র্যাগিং এ কোনো শিক্ষক, অশিক্ষক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে, সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন/বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারী আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬.২ বুলিং ও র্যাগিং এ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ/ গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি/এডহক কমিটি/বিশেষ করে কোনো সভাপতি/সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিধি, আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারী আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. বুলিং সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তির পদ্ধতি:
৭.১ অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট আবেদন দাখিল করবেন।
৭.২ বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ প্রাপ্ত হলে প্রতিষ্ঠান প্রধান কমিটি গঠন করে তদন্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ৪.0 এর অধীন গঠিত কমিটিও তাদের নিকট উপস্থাপিত অভিযোগ তদন্ত পূর্বক প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
০.৩ তদন্তকারী টিম বুলিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে সর্বোচ্চ ৭ (সাত) দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট জমা দেবেন।
৭.৪ প্রতিষ্ঠান প্রধান তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপনপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে নীতিমালায় বর্ণিত পদক্ষেপসমূহ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহন করবে।
৯। সরকার প্রয়োজন মোতাবেক যে কোনো সময়ে প্রণীত নীতিমালাটি পরিবর্ধন/সংযোজন/বিয়োজন করতে পারবে।
এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস