ড. ইউনূস
শ্রম আদালতে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ, বিচার চলবে
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজ (সামারিলি রিজেক্ট) করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণে আর কোনো বাধা নেই বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
মামলার অন্যান্য আরও তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। তাদের বিরুদ্ধেও বিচার কাজ চলতে বাধা নেই।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে রায় দেন।
আদালতে আজ ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ।
অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটর্জি বাপ্পাী।
এদিকে ন্যায়বিচার পাননি বলে অভিযোগ করে ড. ইউনূসের আইনজীবী বলেন, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। আশা করছি সেখানে ন্যায়বিচার পাবো।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের ওপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায় পাঠ করেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। প্রায় দুই ঘণ্টা রায় পাঠ শেষে ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।
এর আগে সোমবার (৭ আগস্ট) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে তার আইনজীবী রুলের শুনানি শেষ করেন। এসময় কলকারখানার পক্ষে আইনজীবী শুনানি শুরু করেন। এরপর আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার এদিন শুনানি মুলতবি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
শুনানিতে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই মামলা এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যিনি নোবেলজয়ী। যিনি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি এমন একজন বাংলাদেশি বিশ্বে যার ক্ষমতা রয়েছে। ড. ইউনূস জাতিসংঘের মহাসচিবের উপদেষ্টা হওয়ায় জাতিসংঘও এ মামলার বিচার পর্যবেক্ষণ করছে।
আইনজীবী আরও বলেন, লেবার কোর্টের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে এটা ফৌজদারি অপরাধ নয়। অথচ তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে সঠিকভাবেই অভিযোগ করা হয়েছে। পরে আদালত তার কাছে আইনের অনেকগুলো ধারার বিষয়ে জানতে চান। এসব বিষয়ে মঙ্গলবার পুনরায় শুনানির জন্য রাখেন।
এর আগে রোববার (৬ আগস্ট) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন কেন বাতিল করা হবে না- এ মর্মে জারি করা রুল শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। তারই ধারাবাহিকতায় রুলটি শুনানি হয়।
তবে গত ৩ আগস্ট ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না মর্মে হাইকোর্টের জারি করা রুল শুনানির জন্য আদালত পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়টি জানিয়ে রুল শুনানির আবেদন করলে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে ওইদিন ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
এরও আগে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে করা আবেদন শুনানি নিয়ে শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি করতে ৩ আগস্ট দিন ঠিক করে পাঠান।
গত ২৫ জুলাই আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মুরশেদ।
এর আগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিলটি করা হয়। আবেদনে রুল স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। ২৫ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল করা হয়।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তখন আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ ( এএম) আমিন উদ্দিন।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। এরপর ২১ জুন অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। আবেদনে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়।
মামলার অন্য তিন আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
গত ৬ জুন অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা ইসলাম। লেবার আইনের ৪-এর (৭) এবং (৮) ধারায় শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি এবং ১১৭ জনকে আর্নলিভ দেওয়া হয়নি। আর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি- এসব কারণে গঠন করা হয় অভিযোগ। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা হয়।
এফএইচ/এমএইচআর/জেডএইচ/জিকেএস