কুড়িগ্রামের চাকিরপশার বিল ইজারা দিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত চাকিরপশার বিল কোনো ব্যক্তি বা সমিতির অনুকূলে ইজারা দিতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে চাকিরপশার বিলের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা ও উন্মুক্ত জলাশায়কে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সব দখলদারকে উচ্ছেদ করতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করে প্রতিবেদনও জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া চাকিরপশার বিলের ১৪১ দশমিক ২৯ একর জমি চাকিরপশার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিডেট নামের সমিতি বরাবর ইজারার বিষয়ে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জারি করা রুলে অননুমোদিত দখল, বন্দোবস্ত ও ত্রুটিপূর্ণ ইজারা দেওয়া থেকে বিলটি রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বিলের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ সব স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদ এবং বিলের ‘পাঠানহাট’ স্থানে নির্মিত আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিল ও বিলের স্বাভাবিক প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিলটি বেআইনিভাবে ইজারা ও বন্দোবস্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল হয়েছে।
তিন মাসের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক (ডিজি), ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) এবং চাকিরপশার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা নিযুক্ত বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (৭ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন বেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) সাইফুজ্জামান জামান।
বেলার পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চাকিরপশার বিলটি রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট, চাকিরপশা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উলিপুর উপজেলায় গিয়ে তিস্তা নদীতে মিলিত হয়েছে। মূলত এটি তিস্তা নদীর একটি উপনদী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উজানে বিলটির দৈর্ঘ্য ১৮-২০ কিলোমিটার এবং ভাটি অংশে ১৬ কিলোমিটার।
বেলা বলছে, বিলটি নদীর সঙ্গে যুক্ত হলেও এটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে চাকিরপশার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমিতির অনুকূলে তিন বছর মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামবাসী আপত্তি জানিয়ে আসছে।
জনগুরুত্বপূর্ণ বিলটির পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণ ও দখলের ফলে বিল ও বিল সংলগ্ন প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ফসলের উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। এর জেরে অন্তত পাঁচ হাজার কৃষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিলটির নানামুখী অব্যবস্থাপনা এবং বিলটি যথাযথ সংরক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটটি করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) গত মাসে ওই রিট করে ।
এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম