হাইকোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট বারে ভাঙচুরের ঘটনা মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০২৩

জামিন আদেশ থাকা সত্ত্বেও যখন গ্রেফতার করা হয়, ধরে নিয়ে টর্চার করা হয়, তখন মৌখিক আদেশে আর কী হবে? হাইকোর্টের সেই অবস্থান এখন আর নেই বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা দেশের মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন উচ্চ আদালত।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কক্ষ ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির ১৮ আইনজীবীর জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানিতে রোববার (৬ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে আজ ১৮ আইনজীবীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের ঘটনা দেশের মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন আদালত। পরে আদালত বিএনপি আইনজীবীদের জামিন আবেদন গ্রহণ করে শুনানির জন্য সোমবার (৭ আগস্ট) দিন ঠিক করে দেন।

আরও পড়ুন>> সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর, ১৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বারের সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির ১৮ আইনজীবীর আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টের এ বেঞ্চে যান সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদনীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

জামিন আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করে এজে মোহাম্মদ আলী রোববারই শুনানি করার সুযোগ চান। এসময় তিনি বলেন, আপনাদের (আদালত) এখতিয়ার আছে। জরুরি ভিত্তিতে একটি তালিকা করে নিতে পারেন। এখনই সাপ্লিমেন্ট করে নিতে পারেন। তখন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, সিনিয়র কাউন্সিল আমার ব্রাদার শুনতে চাইতেছে না। আপনারা অন্য সিনিয়র কোর্টে চেষ্টা করেন, প্লিজ।

আইনজীবী বলেন, আপনারা সব কোর্ট যদি এমন করেন তাহলে আমাদের কী হবে, আমরা কোথায় যাব? জুডিসিয়ারির যদি এমন অবস্থা হয়, যেখানে আমরা আইনজীবীরা এখানেই প্রাক্টিস করছি। এ অঙ্গনের আইনজীবী হিসেবে আমরা সুরক্ষা চাইছি। এ বিষয়ে আপিল বিভাগেরও নির্দেশনা রয়েছে। পরে আদালত বলেন, ঠিক আছে, আজকে দিয়ে যান, কালকে শুনবো। কালকে তালিকায় আসবে।

তখন বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, তাহলে কাল পর্যন্ত পুলিশ যাতে গ্রেফতার না করে সেই নির্দেশ দিয়ে দেন। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা তো সবসময় আপনাদের কাছেই আসি। আপনাদের যদি একটা আদেশ থাকে, যাতে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করে। প্রয়োজনে একটা মৌখিক আদেশ দেন।

আরও পড়ুন>> বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের জামিন শুনানি সোমবার 

এ সময় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ বিচারক বলেন, এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কে বা কারা করেছে তা জানি না। কিন্তু সারাদেশের মানুষ এগুলোকে ভালোভাবে নিচ্ছে না।

এ সময় আইনজীবী মামুন মাহবুব, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের বক্তব্যকে একাডেমিক বক্তব্য উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, যা বলতেছেন তার সবই একাডেমিক, আমরা একাডেমির মধ্যে আছি, প্রাক্টিক্যালি নেই।

এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে— আমরা অর্ডার পাস করেছি তারপরও বিভিন্ন জায়গায় আসামি ধরা হয়েছে। টাকা-পয়সা চাইছে এমন ধরনের ঘটনাও আছে। ল’য়ার সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তারপরও ধরে নিয়ে কোর্টে প্রডিউস করেছে। রিমান্ডেও পাঠিয়েছে। হাইকোর্টের অনলাইনে আদেশ আছে, সেটাও দেখে না। পরে আদালত সোমবার শুনবেন বলে জানিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালতকে আমরা বলেছি, আমরা কোর্ট অফিসার। আমরা লিগ্যাল সাপোর্টের জন্য আপনাদের এখানে এসেছি। উনারা বলেছেন, আগামীকাল জামিন আবেদন শুনবেন। তখন আমরা আবেদন করেছি, অন্তত মৌখিকভাবে হলেও আপনারা একটি আদেশ দেন। যাতে আইনজীবীদের গ্রেফতার না করা হয়। তখন আদালত বলেছেন, এর আগে কয়েকজনকে আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার না করতে বলেছিলাম। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে টর্চার করা হয়েছে এটা আমরা শুনেছি। ল’ইয়ার সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আগের বিচারব্যবস্থা যেভাবে ছিল এখন সেভাবে তো চলছে না।

এর আগে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে জামিন আবেদন নিয়ে গেলেও সেই কোর্ট তাদের জামিন আবেদন শুনেননি। পরে তারা হাইকোর্টের এ বেঞ্চে যান।

তারেক দম্পতির বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে এক পর্যায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিক উল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় ১৮ আইনজীবীর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।

এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।