ভিত্তিহীন মামলায় তারেকের সাজা হয়েছে: জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম
সরকারের নির্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাজানো চার্জশিট দাখিল করে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এছাড়া ভিত্তিহীন মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে থেকে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আগামী রোববার সুপ্রিম কোর্ট বার, ঢাকা বারসহ দেশের সব আইনজীবী সমিতিতে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আগামী ৮ জুলাই সব আইনজীবী সমিতিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
লিখিত বক্তব্যে কায়সার কামাল বলেন, গত ২ আগস্ট আদালত এক মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে ফরামায়েশি সাজা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে তাদের নামে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০১ টাকা ৩৭ পয়সা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের পরিবারকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন উদ্দেশ্যে এই মামলা দায়ের করা হয়।
‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তার কন্যা জাইমা রহমানের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ১০ কাঠা প্লট রয়েছে। যা তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি।’
‘প্রকৃতপক্ষে, তারেক রহমান নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কোনো প্লট নেই। একইভাবে গাজীপুর সদর থানার ৬৬ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৫ শতাংশ জমি তারেক রহমানের নামে ক্রয়কৃত দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমানের নামে এমন কোনো সম্পত্তি গাজীপুর জেলায় নেই। এর আগে দুদককে অবহিত করা হয়েছিল যে ওই জমির মালিকানার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ দুদক সরকারের নির্দেশে সাজানো চার্জশিট দাখিল করে এবং সেই ভিত্তিহীন মামলাতেই তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।’
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরও বলেন, মামলার চার্জশিটে বলা হয় তারেক রহমান দৈনিক দিনকাল পত্রিকার এক কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৩৫০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অথচ তারেক রহমান দৈনিক দিনকাল পত্রিকার মালিক নন। তিনি শুধুমাত্র প্রকাশক ছিলেন। তাছাড়া তিনি রহমান গ্রুপ নামে বিভিন্ন কোম্পানিতে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২ হাজার ৫০টি শেয়ার ক্রয় করেছেন বলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলায় শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি সংস্কারের জন্য ৩৪ লাখ টাকা খরচের অভিযোগ আছে। যা তারেক রহমান তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন। সব মিলিয়ে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার কথিত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে অভিযোগ সাজানো এবং ভিত্তিহীন। মূলত তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে এই সাজা দেওয়া হয়েছে।
মামলায় ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গে কায়সার কামাল বলেন, ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুটি এফডিআর, যার মোট মূল্য ৩৫ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাইম ব্যাংকের বনানী শাখায় দুটি এফডিআর, যার একটি ২৫ লাখ টাকার এবং অন্যটি ১০ লাখ টাকার, যা তারেক রহমানের অর্থে কেনা বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ডা. জোবায়দা রহমান তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছ থেকে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে উপহার হিসেবে ওই টাকা পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এই মামলায় মাত্র ১৬ দিনে ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।অথচ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলাসহ লক্ষাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলায় বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আবার আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, বাহাউদ্দিন নাসিম, মহিউদ্দিন খান আলমীগরের মামলা খালাস হলেও একই ধরনের অভিযোগে বিএনপি নেতাদের নামে দায়েরকৃত মামলার সাজা দেওয়া হয়।
সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বিচারকদেরকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, এই কারণেই আমরা এই ধরনের ফরমায়েশি রায় প্রত্যাখ্যান করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট মীর নাছির উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
এফএইচ/কেএসআর/জিকেএস