শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রম চলবে না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৩

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। তবে এ মামলার বিষয়ে স্থিতি অবস্থা (স্ট্যাটাসকো) রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। ফলে এখন উচ্চ আদালত হাইকোর্ট ও শ্রম আদালতে মামলার কাযর্ক্রম আপাতত চলবে না।

একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পুর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্যে আগামী ৩ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আদালত। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এর চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মুরশেদ।

এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। আবেদনে রুল স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিকেলে সেটির ওপর চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হয়।

এরও আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (২৩ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।

এর আগে গত ২১ জুন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। আবেদনে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়।

ওইদিন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আবেদনের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়।

মামলার অন্য তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

গত ৬ জুন অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা ইসলাম।

লেবার আইনের ৪-এর (৭) এবং (৮) ধারায় শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি এবং ১১৭ জনকে আর্নলিভ দেওয়া হয়নি। আর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি- এসব কারণে অভিযোগ গঠন করা হয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এরমধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা হয়।

এরপর গত ৮ মে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

গত বছরের ১৭ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলা বাতিলে ইউনূসের আবেদনে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগের মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।

এরপর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে ৩১ মে কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নির্দেশ দেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দেন আদালত।

আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪- এ তিন অর্থবছরে নিজের নামে গঠিত দুটি ট্রাস্ট ও একটি প্রতিষ্ঠানে ৭৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা স্থানান্তরের আয়কর নথিতে বলা হয়েছে, এ টাকা মৃত্যুভীতি থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে দান করেন তিনি।

ওইদিন উচ্চ আদালত জানান, ব্যক্তি ও পারিবারিক স্বার্থে ট্রাস্ট গঠন করেছেন ড. ইউনূস। মৃত্যুভীতি থেকে সেই ট্রাস্টে টাকা দান অকল্পনীয়। ফলে দানকর অব্যাহতি পাবেন না। পরিশোধ করতে হবে রাষ্ট্রের পাওনা প্রায় ১২ কোটি টাকা। রায়ে বলা হয়, তিন মামলায় ড. ইউনূসের কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।