ভোলা জেলা জজ আদালত
পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে কর্মচারী নিয়োগ, বাতিল করলেন হাইকোর্ট
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদনকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। সে পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে ভোলা জেলা জজ আদালতের কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
আরও পড়ুন: ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি: জবি শিক্ষার্থী শাকিলের জামিন
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট বাকের উদ্দিন ভুইয়া।
২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অফিস আদেশ নম্বর যথাক্রমে ৬০, ৬১, ৬২ ও ৬৩ এর মাধ্যমে ১৪ জন ও ২০২১ সালের ১৯ জুলাই ১২ জনকে নিয়োগ দেন ভোলা জেলা জজ আদালত। ওই নিয়োগ হাইকোর্টে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ২০১৫ সালের ৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের এক সার্কুলার অনুসারে দেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (নরী, শিশু অন্যান্য বিশেষ আদালতে) তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার স্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট জেলায় উপযুক্ত কোনো প্রার্থী পাওয়া না গেলে অন্য কোনো জেলার প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
ওই নিয়োগ কার্যক্রমে বাতিলকৃতদের আবেদনের সুযোগ থাকবে এবং বয়স শিথিল করা হবে।
আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পদ অর্জন: এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ১৮ সেপ্টেম্বর
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই ভোলা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা জজ আদালত। বিজ্ঞপ্তিতে শাঁটলিপিকার একজন, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর সাতজন, জারিকারক একজন, অফিস সহায়ক দুজনসহ মোট ১৪ পদের কথা রয়েছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারণে ২০২১ সাল পর্যন্ত স্থগিত ছিল। এরপর ওই বছরের ২ ও ৪ এপ্রিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন মৌখিক পরীক্ষার পর জেলা ও দায়রা জজ এ বি এম মাহমুদুল হকের সই করা নোটিশে বলা হয়, উপযুক্ত প্রার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের নিয়োগপত্র ডাকযোগ তাদের বর্তমান ঠিকানায় পাঠানো হবে।
কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অফিস আদেশ নম্বর যথাক্রমে ৬০, ৬১, ৬২ ও ৬৩ এর মাধ্যমে ‘নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির’ শূন্য পদের বিপরীতে মোট ১৪ জনকে এবং একই দিনে পৃথক অফিস আদেশ নম্বর যথাক্রমে ৬৪, ৬৫ ও ৬৬ এর মাধ্যমে শূন্য পদের বিপরীতে মোট ১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সম্রাটের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে হাইকোর্টে দুদকের আবেদন
২০১৬ সালের ৭ জুলাই অতিরিক্ত জেলা জজ ও দায়রা জজের কার্যালয় স্মারক নম্বর ৩৫৯ এর মাধ্যমে ১৪টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী জিয়াউল হক নিয়োগপ্রাপ্ত ৩২ জনের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে।
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে হাইকোর্টে দেওয়া প্রতিবেদনে ভোলা জেলা জজ বলেন, ৬৪, ৬৫ ও ৬৬ স্মারকে যে নিয়োগপত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। আমরা স্মারক অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ করিনি। দরখাস্তকারী ৩২ প্রার্থীর নিয়োগের যে বিষয় উল্লেখ করেছেন তা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি এমন প্রার্থীদের নিয়োগের অভিযোগও ভিত্তিহীন। ১৪ পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৪ জনকে।
প্রতিবেদন দেওয়ার পর নিয়োগ সংক্রান্ত জারি করা ওই রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায়, ২০২১ সালের ১৯ জুলাই করোনাভাইরাসের কারণে নতুন নিয়োগ কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২১ সালের ২, ৩, ৪ এপ্রিল অফিস সহায়কের শূন্য পদে, ‘জেলা জজ ও অধস্তন আদালতসমূহ এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতসমূহের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী ১২ জনকে পুনরায় নিয়োগ দেন ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
উক্ত নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই আবেদন শুনানি শেষ ১২ জনের নিয়োগ স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সবশেষ জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
এফএইচ/এমএইচআর/জেডএইচ/জিকেএস